নির্বাচনী রোডম্যাপে অনেক বিতর্কের অবসান ঘটবে : মির্জা ফখরুল

6 days ago 13

নির্বাচনী রোডম্যাপ এই মুহূর্তে খুব জরুরি উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে আর বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা হলে অনেক বিতর্কের অবসান হবে। একটি নির্বাচনই দেশকে স্থিতিশীলতা দিতে পারে।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মানুষের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা। আমাদের একটাই কথা- দেশে অনেক জঞ্জাল, অনেক আবর্জনা। এক বা দুইদিনের মধ্যে সব জঞ্জাল সরানো সম্ভব নয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচন দিয়ে আপনাদের দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, নেতারা এত নির্বাচন নির্বাচন করছেন। রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচন নির্বাচন করছেন কেন? আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে নির্বাচনের কথা বলছি। কারণ একটি অবাধ নির্বাচনই পারে বাংলাদেশকে স্থিতিশীলতা দিতে।’

সরকারকে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে, সংস্কার করার জন্য সরকার অনেকগুলো কমিশনও গঠন করেছে। তাদের ওপর জনগণের আস্থা আছে, আমাদেরও আস্থা আছে। কিন্তু আমাদের যেটা প্রত্যাশা, স্বল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে, বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার করে সেই নতুন আলোর দিকে এগিয়ে যাওয়া। যত দেরি হবে, তত বিতর্কের সৃষ্টি হবে এবং ততই বাংলাদেশের শত্রুরা সংগঠিত হবে; শেখ হাসিনা বেশি শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন, সেই চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, ‘একটা বিশাল সংগ্রাম, একটা অভাবনীয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ এখন দম ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। এই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে কথা বলব, কিছুদিন আগেও তা কল্পনা করিনি। কারণ ফ্যাসিস্টরা এই জায়গাগুলো আমাদের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। এমনকি যারা স্বাধীনতাযুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তারাও তাদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর তাদের সম্মানটুকু পাননি। এই দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকারকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটানো হয়েছে।’

মওলানা ভাসানী প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই লোকটিকে আমরা, এই জাতি, এই দেশ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি। মওলানা ভাসানীকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।’

১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে এই মুহূর্তে দেশ এবং জাতির একমাত্র প্রত্যাশা- জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা সুস্পষ্ট রূপরেখা আপনারা হাজির করুন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা এমন একটা নির্বাচন চাই, যে নির্বাচনে সবাই ভোট দিতে পারেন। আমরা এই সরকারকে অনুরোধ করি- যত দ্রুত সম্ভব সেই রকম একটা নির্বাচন দিয়ে মানসম্মান নিয়ে, আরও বেশি সম্মান অর্জন করে, আবার জনগণের কাতারে বা নিজ নিজ পেশায় ফিরে যান।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মেয়াদের ১০০ দিন পর এখন আমরা আপনাদের পরিষ্কার পথনকশা দেখতে চাই। আশা করব, আপনারা পথ হারাবেন না। এ দেশের জনগণ এবং বিরোধী দল—এখন পর্যন্ত আমরা কিন্তু সব হজম করছি। কারণ এটি আমাদের সমর্থিত সরকার। কিন্তু আমাদের সমর্থনটা শর্তহীন সমর্থন নয়। যে পর্যন্ত আপনারা সোজা পথে আছেন, রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের সহযোগিতা করবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র আমাদের রুখতে হবে। আর রুখতে হলে এই অপরাধীদের বিচার করতে হবে। যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার থেকে কোনো রেহাই নেই।

সভাপতির বক্তব্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মওলানা ভাসানীকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। মওলানা ভাসানীর জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

জনসভায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের উপদেষ্টা জসিম উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Read Entire Article