নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকে বিএনপি সমর্থন করে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গুলশানের নিজ বাসায় কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রতি জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে, এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নির্ধারিত হোক। এটা কোর্ট নির্ধারণ করবে। এর জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। এই আইন আগে ছিল না। এখন গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যেকোনো দলের বিরুদ্ধে আদালত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আদালত সিদ্ধান্ত নিলে নির্বাচন কমিশন মানতে বাধ্য। এই প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো প্রক্রিয়াকে বিএনপি সমর্থন করে না।
কিছু আসন পাওয়ার লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কেউ পিআর পদ্ধতি চাইলে তা ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসবে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপি পিআরের পক্ষে নয়, অন্যদিকে কয়েকটি দল পিআরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচন পেছানোর আশঙ্কা দেখছে কি না জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য অথবা বাধাগ্রস্ত করার জন্য যেকোনো রাজনৈতিক কৌশলকে দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। এটা আমরা আগেও বলেছি। কারণ ভোটাধিকার প্রয়োগের দাবি আদায়ের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, দেশের মানুষ গত ১৬-১৭ বছর অবিরাম সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে, রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের দাবি পরে গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। এই অধিকার তখনই প্রতিষ্ঠা হবে যখন আমরা অবাধ-সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ পাবো, সরকার পাবো। সুতরাং যারাই এই পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। এসব রাজনৈতিক কর্মসূচির জবাব দেওয়ার জন্য জনগণই বিচারক।
বিএনপি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি মেনে নিলে অন্যরা নিম্নকক্ষে প্রচলিত পদ্ধতি মেনে নিতে পারে। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা উচ্চ ও নিম্ন সব জায়গায় পিআরের বিপক্ষে।
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, দ্রুত গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন না হলে দেশে একটি সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে, তখন পতিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে। তাদের হাত ধরে দেশে আঞ্চলিক শক্তি জড়িয়ে যেতে পারে। এটা কেন্দ্র করে বৈশ্বিক শক্তিও সুযোগ নিতে পারে। এতে জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২০২৪ সালের নির্বাচনে ২৮ দল অংশগ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিষিদ্ধ চাইলে এই ২৮টি দলকে দোসর হিসেবে নিষিদ্ধ চাইতে হবে। তাহলে নির্বাচনটা কাদের নিয়ে হবে—প্রশ্ন রাখেন সালাহউদ্দিন।
এই বিএনপি নেতা বলেন, নিজেদের অতিরিক্ত সুবিধার জন্য আরও অনেক দলের নিষিদ্ধ চাইতে পারে। তবে এখানে আওয়ামী লীগের বিষয়টি আলাদা, তারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য দায়ী। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরাই প্রথম আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি করেছিলাম।
‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি অন্য কোনো দলের বিরুদ্ধে যদি একই অভিযোগ থাকে, সেটা আদালতে উত্থাপন করা যেতে পারে। আইন আগে ছিল না, এখন সংশোধন হয়েছে।’ যোগ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
কেএইচ/ইএ/এএসএম