পালিয়ে আত্মরক্ষার পর রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্রে গিয়ে ফের নির্যাতনের শিকার হয়েছে স্মৃতি আক্তার (১৬)। তার অভিযোগ, পুনর্বাসনে কেন্দ্রে শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের তথ্য গণমাধ্যমে বলায় তার চুল কেটে দিয়েছেন কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা। সেইসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বারবার হয়রানি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের অনিয়মের তথ্য গোপন করার জন্য চাপ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই কিশোরী দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এদিকে রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্র থেকে নিখোঁজের ১৩ দিনেও দুই নিবাসী আশা ও নিতু উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের স্বজন ও স্থানীয়রা।
পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্যাতন থেকে মেয়েকে রক্ষায় বুধবার (২৫ জুন) রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ নিজ জিম্মায় নিতে আবেদন করেন নিবাসী স্মৃতি আক্তারের মা মুক্তি বেগম। বেলা ১১টায় শিশু পুনর্বাসন থেকে স্মৃতিকে আদালতে আনার কথা থাকলেও বিকেল ৫টার দিকে তাকে আনা হয়। আদালতের বিচারক সোয়েবুর রহমান স্মৃতির জবানবন্দি নেন এবং এজলাসে শুনানি করে তাকে মায়ের জিম্মায় দেন।
আদালতে ভুক্তভোগী স্মৃতি আক্তার জানায়, বেলা ১১টায় তাকে আদালতে উপস্থাপন করার কথা থাকলেও পুলিশ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাকে দুবার থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেইসঙ্গে পালিয়ে আত্মরক্ষার সময় যে বাড়িতে গিয়ে তারা উঠেছিল, সেই বাড়িতে তাকে নিয়ে গিয়ে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বিকেলে তাকে আদালতে উপস্থাপন করে পুলিশ।
স্মৃতি আক্তারে ভাষ্য, ‘পুনর্বাসন কেন্দ্রে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে আমিসহ চারজন পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে আবারও সেই কেন্দ্রেই পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রে যাওয়ার পর সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। তারা বলে, আমার কারণে নাকি তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি ঘুমিয়ে থাকলে তারা আমার চুল কেটে দিয়েছে। আমি অসুস্থতা অনুভব করলে তারা শুধুমাত্র নাপা ট্যাবলেট খেতে দেয়। যারা আমার ও নিবাসীদের সঙ্গে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’
স্মৃতি আক্তারের মা মুক্তি বেগম বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে আমার মেয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ আদালতের মাধ্যমে আবারও সেই পুনর্বাসন কেন্দ্রে আমার মেয়েকে পাঠিয়েছে। মেয়ে কেমন আছে জানতে আমি পুনর্বাসন কেন্দ্রে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তারা বলেন, আমি নাকি আমার মেয়েকে পাচার করতে এসেছি। আমার মেয়ের চুল কেটে দেওয়াসহ নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।’
এ বিষয়ে আইনজীবী জোবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী স্মৃতি আক্তারকে তার মায়ের জিম্মায় দিতে আদালতে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আদালত স্মৃতির জবানবন্দি নিয়ে তাকে তার মায়ের জিম্মায় দিয়েছেন। তবে আমার প্রশ্ন-নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা এক শিশুকে নিরাপদে থাকার জন্য রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে। সেখানে নিবাসীরা যদি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে যায়।’
এ বিষয়ে জানতে রংপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক অনিল চন্দ্র বর্ম্মনের ফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীর দেওডোবা ডাংগীরপাড় এলাকার রংপুর সমন্বিত শিশু পুনবার্সন কেন্দ্র থেকে গত ১২ জুন রাতে নিখোঁজ হয় নিতু, স্মৃতি, কৃতি ও আশা নামে চার কিশোরী। ১৫ জুন পরিবারের সদস্যরা স্মৃতি ও কৃতিকে নগরীর চিড়িয়াখানা এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে পুনরায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠায়।
এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানান। আপত্তির কারণ হিসেবে পুনর্বাসন কেন্দ্রে মেয়ের ওপর নির্যাতন ও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত বলে জানান।
জিতু কবীর/এসআর/জিকেএস