নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সাগরে মাছ শিকার, জড়িত সিন্ডিকেট

3 months ago 37

বঙ্গোপসাগরে সবধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে পটুয়াখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে। পুরো উপকূলজুড়ে চলছে প্রকাশে মাছ শিকার।

কুয়াকাটা পৌর ভবনের বিপরীত দিকে অবস্থিত কুয়াকাটার প্রধান মাছ বাজার, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘মেয়র বাজার’ নামে। এই মাছের বাজারে সাগরে ধরা পড়া বিভিন্ন মাছ ডাকের মাধ্যমে পাইকারি বিক্রি হয়। সম্প্রতি ‘মেয়র বাজার’ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সকাল থেকে ভ্যান ও অটোরিকশায় করে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। এরমধ্যে লইট্যা ও তুলার ডাডি মাছই বেশি। এছাড়া রূপচাঁদা, বৈরাগী, কোরাল, তাপসিসহ অন্যান্য মাছের উপস্থিতিও চোখে পড়ে। তবে ইলিশ মাছ একেবারেই কম।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সাগরে মাছ শিকার, জড়িত সিন্ডিকেট

প্রকাশ্য ডাকে বিক্রি করা হচ্ছে এসব মাছ। পাইকাররা এসব মাছ কিনছেন। দুপুরের পর থেকে এসব মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। ট্রাক ও বাসে করে পাঠানো হচ্ছে এসব মাছ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন প্রক্রিয়া নিরাপদ করতে নির্দিষ্ট একটি সিন্ডিকেটকে দিতে হয় টাকা। কুয়াকাটা মেয়র বাজারে এই প্রক্রিয়ার সমন্বয় করেন মাছ ব্যবসায়ী নুর জামাল গাজী। তার মালিকানাধীন মেসার্স গাজী ফিশ থেকে এসব নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রতিটি ট্রলার থেকে ট্রিপপ্রতি ৫-১০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন তিনি।

তবে টাকা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নুর জামাল গাজী। তিনি বলেন, ‘কাউকে কোনো টাকা দেই না। চুরি করে মাছ ধরি, চুরি করে বেচি।’

আরও পড়ুন

কুয়াকাটার মতো একটি পর্যটন এলাকায় প্রকাশ্যে মাছ শিকার ও বিক্রি চললেও বিষয়টি জানে না মৎস্য বিভাগ। এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘সার্বক্ষণিক তো আমাদের পক্ষে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। সাগরে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, নৌবাহিনীর সদস্যরা আছেন। আমরা সবাই কাজ করছি। এরপরও গত কয়েকদিন আবহাওয়া কিছুটা খারাপ থাকায় হয়তো এমটি হয়েছে।বিষয়টি আবারও দেখা হবে।’

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সাগরে মাছ শিকার, জড়িত সিন্ডিকেট

তবে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে নুর জামালের যোগাযোগ নেই এবং তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না বলেও জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।

এদিকে পুরো বিষয়টির সঙ্গে নিজের দপ্তর জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযান সফল করতে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করা হবে।

কুয়াকাটা নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় নৌপুলিশের কোনো কাজ নেই। সাগরে মাছ ধরা বন্ধে কোস্টগার্ড কাজ করবে, আর মাছ বিক্রি কিংবা পরিবহনে মৎস্য বিভাগ অভিযান পরিচালনা করবে; এটা তাদের দায়িত্ব।’

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সাগরে মাছ শিকার, জড়িত সিন্ডিকেট

এ বিষয়ে নিজামপুর কোস্টগার্ড স্টেশন থেকে জানানো হয়, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচি সফল করতে তারা নিয়মিত সচেতন করার পাশাপাশি সাগরে অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে এসময় নিয়মিত মাছ ধরা ও বিক্রির বিষয়ে তাদের জানা নেই।

সামুদ্রিক মাছের সংরক্ষণ ও প্রজননের লক্ষ্যে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। সে অনুযায়ী চলতি বছরও নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালে বঙ্গোপসাগরে সবধরনের মাছ শিকার বন্ধ থাকবে। এ কারণে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় বেকার থাকতে হবে সমুদ্রে মাছ শিকারি জেলেদের।

এসআর/এমএস

Read Entire Article