নিষ্ক্রিয় ঠিকাদার, দায় চাপাতে ব্যস্ত সড়ক বিভাগ

2 weeks ago 18

মেয়াদ শেষ হলেও অগ্রগতি নেই কাজের
বাজারের কমিটির ওপর দায় চাপাচ্ছে সড়ক বিভাগ
ঠিকাদার-সড়ক বিভাগের যোগসাজশের অভিযোগ

কোনো কারণ ছাড়াই থেমে রয়েছে গল্লামারী সেতু নির্মাণ প্রকল্প। সড়ক বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান চালালেও শুরু হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ। প্রতিদিন একটি মাত্র সেতু ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছে। যার দরুণ প্রতিনিয়ত গল্লামারী মোড়ে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। যানজটের কারণে ভোগান্তি এবং সময়ের অপচয় হচ্ছে সাধারণ যাতায়াতকারীদের।

সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়া এবং সড়ক বিভাগের উদাসিনতায় নগরবাসীকে এ প্রকল্প বিষফোঁড়ার যন্ত্রণা দিচ্ছে বলে দাবি নাগরিক সমাজের। আর গল্লামারী বাজার কমিটির লোকজন কাজে বাধা দিচ্ছে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর অভিযোগ করলেও বাজার কমিটি বলছে তারাও চায় কাজ হোক।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরীর গল্লামারী মোড়ে ময়ূর নদের ওপর দুটি স্টিল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর। প্রকল্প অনুযায়ী, চলতি বছর ৩০ মার্চ সেতু দুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি। দুইটি স্টিল সেতু এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সড়ক বিভাগের সঙ্গে ঠিকাদারের চুক্তি মূল্য ছিল ৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

সেতু নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংকে (এনডিই) কার্যাদেশ দেয় সড়ক বিভাগ। দীর্ঘদিন কাজ থেমে থাকার পর গত ২৭ জুলাই গল্লামারি বাজারের দুই পাশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে খুলনা সড়ক বিভাগ।

নিষ্ক্রিয় ঠিকাদার, দায় চাপাতে ব্যস্ত সড়ক বিভাগ

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। একটি মাত্র সেতুর মাঝে বাঁশ দিয়ে ডিভাইডার তৈরি করে আসা যাওয়া করছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন তীব্র যানজট ডিঙিয়ে সাধারণ মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ময়ূর নদের অবস্থাও শোচনীয়। দীর্ঘদিন ধরে অপরিষ্কার অবস্থায় রয়েছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে। সেতুর দুই পাড়ে ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা সড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগের তদবিরে সেতুর কাজ পেয়েছে এনডিই। ভাগ বাটোয়ারার জটিলতা নিয়েই সেতুর কাজ মূলত থমকে আছে। ৫ আগস্টের আগে এ দপ্তরটি খুলনা শহরের দুর্নীতির আতুর ঘর হিসেবে পরিচিত ছিল। আগের প্রকৌশলী মাসুদ সাহেব এখানকার রাজা বলে নিজেকে দাবি করতেন। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। তবে উন্নয়ন কাজের পরিবর্তন হয়নি। আগেতো ডাইরেক্ট দুর্নীতি হতো। কিন্তু এখন পার্সেন্টেজের বিষয়ে কনফর্ম না হলে কোনো কাজ এগোয় না।

আরও পড়ুন-

তিনি আরও বলেন, আমরা ভাই ছোট চাকরি করি। আগে অত্যাচারিত হয়েছি লোকচক্ষুর সামনে। আর এখন প্রতিবাদ করতে গেলে গলা ধরে বলবে, তুই শালা ফ্যাসিস্ট। অন্যায় দেখেই শুধু দিন পার করতে হবে। রিটায়েরমেন্টের সময় হলে বেঁচে যাবো।

ইজিবাইক চালক জামশেদ আলী বলেন, প্রতিদিন এই রুটে ইজিবাইক চালাই। সকাল থেকেই এ রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। যাত্রী নিয়ে এসে আবার বের হতে গেলে অনেক সময় নষ্ট হয়। গরমের সময় তো ঘাম ছুটে যায়। সেতু আর রাস্তার কাজটি দ্রুত হলে এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যেতো।

নিষ্ক্রিয় ঠিকাদার, দায় চাপাতে ব্যস্ত সড়ক বিভাগ

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ মোল্যা বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে এ মোড়ে আমার ফলের ব্যবসা। কিন্তু বর্তমানে যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তা কখনোই দেখিনি। গল্লামারি মোড়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। হাজার হাজার মানুষ এ পথ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। তীব্র যানজটের কারণে এ মোড় এখন অনেকে এড়িয়ে চলেন। দিনের বেলায় তো যানজট লেগেই থাকে।

তিনি আরও বলেন, দ্রুত এ সেতুর কাজ শেষ হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে। মার্কেটগুলো আরও উন্নত হবে। যানজটের কারণে অনেক ক্রেতা এদিকের মার্কেটে আসতেও চান না।

গল্লামারি মৎস্য আড়ৎদার ও ব্যবসায়ী বহুমখী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা খন্দকার ফারুক হোসেন বলেন, আমরা চাই সেতুর কাজটি সম্পন্ন হোক। এতে সাধারণ ব্যবসায়ীদের উপকার হবে। দু’টাকার বেচাকেনা বেশি হবে। তবে এক্সেন সাহেবের অভিযোগ সত্য না। আমাদের বাজারের কোনো লোকজন তাদের কাজে বাধা দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, গত দুই বছরে বাজারের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। দুই বছর ভোগান্তি দিয়ে এখন আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। বাজারের প্রত্যেকটি মানুষ চাচ্ছেন সেতুর কাজটি সম্পন্ন হোক। উচ্ছেদ অভিযানে সাধারণ ব্যবসায়ীদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাতেও আমাদের কোনো অভিযোগ নাই। আমরা চাই তারা সেতুর কাজটি করুক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একজন নিয়মিত ঠিকাদার বলেন, সেতুর কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। আমরাও তো কাজ করি। ভারী যন্ত্রপাতি বাজারের দিকে না রেখে উল্টো রাস্তায় রাখুক। তাতে আহামরি সমস্যা তো হওয়ার কথা না।

তিনি আরো বলেন, মূলত ঠিকাদার এখন কাজ করবে না। ঠিকাদারের ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা চলছে। এজন্য বাজারের সঙ্গে গণ্ডগোল বলে কাজ আটকে আছে এমন একটা খবর সব জয়াগায় ছড়ানো হচ্ছে।

নিষ্ক্রিয় ঠিকাদার, দায় চাপাতে ব্যস্ত সড়ক বিভাগ

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেচ বাবুল হাওলাদার বলেন, গল্লামারি সেতুর কাজটি কোনো কারণ ছাড়াই থেমে আছে। প্রতিদিন যানজটে নগরবাসীর যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমরা বার বার দাবি তোলার পর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসিনতায় নগরবাসীকে এ প্রকল্প এখন বিষফোঁড়ার মতো যন্ত্রণা দিচ্ছে। তবে অতিদ্রুত কাজ শুরু করে সম্পন্ন না করলে আমরা আন্দোলনের ডাক দিবো।

খুলনা জেলা সড়ক ও জনপথ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, আমরা অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু বাজার কমিটি বাধা দিচ্ছে এবং অ্যাটাক করার কারণে আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। ওই জায়গা ঘিরতে দিলে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু করবো। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে ওই স্থান ঘিরতে পারছি না। কাজ শুরু করার জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে।

তিনি আরও বলেন, এনডিই কোম্পানি আপনার সঙ্গে কথা বলবে না। ওদের নিষেধ করা আছে।

এফএ/এমএস

Read Entire Article