নিয়োগ পেয়েও যোগ দিতে পারছেন না সচিবরা

3 hours ago 3

নিয়োগ পাওয়ার পরও কর্মস্থলে যোগ দিতে পারছেন না কোনো কোনো সচিব। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিয়োগ অনুমোদন হলেও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা অনুমতি না দেওয়ায় ওই সচিবরা যোগ দিতে পারেননি।

এটিকে ‘প্রশাসনের একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা’ বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।

গত কিছুদিনের ব্যবধানে পদোন্নতি পাওয়া দুজন সচিব তাদের কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেননি। নিয়োগ পাওয়ার পরও যোগ দিতে না পারায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন কর্মকর্তারা।

দীর্ঘদিন খালি থাকার পর গত ৩ আগস্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতারকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদায়নের পরই ই-মেইলে যোগদানপত্র দেন শাকিল আখতার। এরপর তিনি সশরীরেও গিয়ে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার তাকে যোগ দিতে দেননি। পরে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

শেষে ২০ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। পরদিন (২১ আগস্ট) যোগ দেন তিনি।

অন্যদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ায় গত ২৮ আগস্ট নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহমান তরফদার।

তিনিও যোগ দিতে গেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন তাকে পরে যোগ দিতে বলেন। দু-একদিন পরে গেলেও উপদেষ্টা তাকে যোগদানের অনুমতি দেননি।

যোগদান করতে না পারায় আব্দুর রহমান তরফদারকে আগের কর্মস্থল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে বসতে দেখা গেছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।

নিয়োগ দেওয়ার পরও কেন যোগদান করতে দেওয়া হয়নি, সেটা দুজন কর্মকর্তাই জানেন না বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, যে মন্ত্রণালয়ে তাদের পদায়ন করা হয়েছে, সেই উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাদের আগে থেকে কোনো জানাশোনা বা যোগাযোগ ছিল না।

তবে উপদেষ্টাদের দপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সচিবদের ক্ষেত্রে উপদেষ্টারা বিবেচনা করেন আগের সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী কি না কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ আছে কি না। এছাড়া জানাশোনা কর্মকর্তা থাকলে সচিবদের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেন উপদেষ্টারা। তাই আস্থা না থাকলে নিয়োগ দেওয়ার পরও যোগদানের ক্ষেত্রে এনডোর্স (অনুমোদন) করেন না উপদেষ্টারা।

এ বিষয়ে জানতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি পরে ফোন দিতে বলেন। তবে পরে আর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের) যোগদান করেছেন। এছাড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটিতে প্রক্রিয়াধীন।’

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘সচিবের পদোন্নতি ও পদায়নে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন লাগে। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার পর তাকে যোগ দিতে না দেওয়ার বিষয়টিতে খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘উপদেষ্টারা হয়তো সচিব পদে নিজের পছন্দের লোক নিতে চাচ্ছেন, সমস্যাটা হচ্ছে এই জায়গায়। এ কারণে তাকে হয়তো এনডোর্স (অনুমোদন) করেননি।’

তিনি বলেন, ‘তবে এ ঘটনা প্রশাসনের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। এ ধরনের ঘটনা সরকার এবং প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এ ঘটনার মাধ্যমে প্রশাসনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন ছাড়া তো সচিব পদায়ন হতে পারে না। তারপর আবার এ রকম হওয়ার তো কথা নয়।’

এ বিষয়ে জানতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে এবং হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরএমএম/ইএ/জিকেএস

Read Entire Article