নেচে-গেয়ে খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব উদযাপন

2 hours ago 7

নাচ-গান আর আনন্দ উৎসবে ১২৫তম বর্ষবিদায় ও নতুন বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপন করেছেন খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিনব্যাপী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে এ অনুষ্ঠান করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী এ অনুষ্ঠানকে খাসিয়া ভাষায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ (Khasi Seng Kutsnem) বলা হয়। উৎসবে সিলেট অঞ্চলের প্রায় অর্ধশত খাসিয়া পুঞ্জির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সব পুঞ্জিপ্রধানকে পাগড়ি পরিয়ে সম্মাননা জানানো হয় ও আমন্ত্রিত অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।

জানা যায়, সেং কুটস্নেম বা বর্ষবিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব। প্রাচীন খাসিয়া সমাজে দেবতার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালিত হতো। প্রতিবছরের মতো এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে নানা সমাহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। যদিও প্রথমে খাসিদের আয়ের ও জীবিকার প্রধান উৎস পানচাষে চলতি মৌসুমে পানের ব্যবসা মন্দার কারণে ও আর্থিক সংকট থাকায় খাসি সেং কুটস্নেম অনুষ্ঠান হবে না বলে জানিয়েছিল খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল, পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান।

নেচে-গেয়ে খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব উদযাপন

মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারকেল গাছের পাতার ছাউনি দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং এর সভাপতিত্বে মঞ্চে অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাওন মজুমদার, কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডি এম সাদিক আল শাফিন, লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান ও খাসি সোস্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পত্মী, ডেবলছড়া পুঞ্জি প্রধান পিডিশন প্রধান, কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) শামীম আখঞ্জিসহ বিভিন্ন পুঞ্জি প্রধানরা।

মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে আদিবাসী খাসিদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবকে ঘিরে পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল।

নেচে-গেয়ে খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব উদযাপন

খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উপলক্ষে নানান রঙের পোশাক পরে খাসিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নাচগান, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। মাঠের একপাশে খাসিদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলা বসে। মাঠের একপাশে সুপারি গাছের পাতাদিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়। তবে এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আয়োজন কিছুটা কম ছিল কারণ একদম শেষ সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিনটি আয়োজন করা হয়।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর ২৩ নভেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষবিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজসজ্জায় সেজে নেচে গেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন। খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১২৫তম বর্ষকে বিদায় ও ১২৬তম বর্ষকে বরণ করে নিলেন খাসিয়া জনগোষ্ঠী। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় ‘খাসি সেঙ কুটস্যাম’ পালন করা হয়। রোববার (২৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হবে খাসি বর্ষবরণ।

নেচে-গেয়ে খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব উদযাপন

সেং কুটস্নেম উৎসবের দিন সবাই মিলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন। অনুষ্ঠানস্থলে পুরো মাঠ জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। এই উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এসে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা প্রত্মী বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনুষ্ঠানটি করতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা ‘সেং কুটস্নেম’ আয়োজন করি। সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা এবং খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বর্ণিল সংস্কৃতির সৌরভ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার আহ্বান নিয়ে ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব পালিত হয়।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে এসে অংশ নেন। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব।

ওমর ফারুক নাঈম/এফএ/এমএস

Read Entire Article