নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়বেন স্টারমার

1 hour ago 6

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্ব নিয়ে লেবার এমপিদের পক্ষ থেকে কোনো চ্যালেঞ্জ ছোড়া হলে তার বিরুদ্ধে তিনি লড়বেন বলে স্পষ্ট করেছেন তার মিত্ররা। স্যার কিয়ার স্টারমারের প্রতি অনুগতদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, তার পদ হয়তো হুমকির মুখে পড়তে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী পাক্ষিকের বাজেট ঘোষণার পরপরই এই সংকট দেখা দিতে পারে। খবর বিবিসির।

সমালোচকরা বলছেন, এই অবস্থা প্রমাণ করে যে, ডাউনিং স্ট্রিট এখন ‌‘সম্পূর্ণরূপে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে’ যেটি ‘বর্তমান সরকারকে সংকট মোকাবিলায় কোনোভাবেই সাহায্য করবে না।’ স্যার কিয়ের স্টারমারকে সরানোর জন্য একটি নেপথ্য ষড়যন্ত্র চলছে বলে মনে করে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার বন্ধুরা।

নেতৃত্ব পরিবর্তনের যে গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে সেটাও তারা সবাইকে পরিষ্কারভাবে জানাতে চাইছেন। স্টারমারকে সরিয়ে দেওয়ার পর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে লেবার এমপিরা যেসব নাম নিয়ে আলোচনা করেছেন তাদের মধ্যে তার ঘনিষ্ঠতম মন্ত্রিসভার কয়েকজন সহযোগী বিশেষ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ রয়েছেন।

কেউ কেউ ধারণা করছেন, জ্বালানিমন্ত্রী অ্যাড মিলিব্যান্ড এবং সাবেক পরিবহনমন্ত্রী লুইস হেইগসহ কয়েকজন ব্যাকবেঞ্চারও এই নেতৃত্বের প্রতি আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। এক মন্ত্রী বলেন, স্টারমার এই চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়বেন।

২০২১ সালের গুরুত্বপূর্ণ উপ-নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ওই নির্বাচনে লেবার পার্টি কনজাভেটিভদের কাছে হেরে যায়। স্যার কিয়ের স্টারমার সেসময় নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন।

লেবার পার্টির অনেকেই মনে করেন, আগামী বছরের মে মাসে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের বিকেন্দ্রীকৃত নির্বাচন এবং ইংল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় নির্বাচনের পর সরকার একটি বড় সংকটের মুখে পড়তে পারে। এই নির্বাচনের ফলাফল ভালো নাও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে দলটির কেউ কেউ এমন আশঙ্কাও করছেন নেতা পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত না। নিজেদের বিরুদ্ধে যে সম্ভাব্য হুমকি এখন ঘনিয়ে আসছে, এ বিষয়ে ডাউনিং স্ট্রিটও অবগত।

লেবার দলের এক জ্যেষ্ঠ এমপি বলেন, লোকাল নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে বলাটা যতই ভালো শোনাক না কেন, আসলে আমি আমার কর্মী-সমর্থকদেরই সংঘর্ষে পাঠাচ্ছি। আমি আমার সব কাউন্সিলর হারাতে পারি না।

লেবার পার্টির আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বাজেটের পর মানুষকে পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করার কারণগুলোর তালিকা প্রতিদিনই বাড়ছে।

যদি ওয়েস সাহসী হন এবং পদক্ষেপ নেন তাহলে বড়দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পুরস্কার পেতে পারেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর অনুগতরা ওয়েস স্ট্রিটিং এর উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বিশেষ সন্দেহের চোখে দেখছেন। স্ট্রিটিং এর একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, এই দাবিগুলো সম্পূর্ণরূপে অসত্য।

তিনি আরও বলেন, ওয়েসের মনোযোগ সম্পূর্ণভাবে এখন ১৫ বছরে প্রথমবারের মতো অপেক্ষমাণ রোগীর সংখ্যা কমানো, দুই হাজার পাঁচশো নতুন জিপি (চিকিৎসক) নিয়োগ এবং যে এনএইচএস তার জীবন বাঁচিয়েছিল সেটিকে পুনর্গঠন করা।

বুধবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কয়েকটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে তার ইংল্যান্ডের এনএইচএস সংস্কার পরিকল্পনা নিয়েই কথা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

এক সরকারি সূত্র জানায়, ডাউনিং স্ট্রিট এখন সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক (বাঙ্কার মোড) অবস্থায় চলে গেছে। সম্পূর্ণভাবে কোনো কারণ ছাড়াই সবচেয়ে অনুগত মন্ত্রিসভার সদস্যদের থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

এই সূত্রটি আরও জানায়, দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, স্যার কিয়েরের দল বারবার নিজের লোকদের বিরুদ্ধেই সংবাদমাধ্যমে তথ্য দিচ্ছে। আগে অ্যাঞ্জেলা, লিসা, লুসির বিরুদ্ধে করেছিল, এবার ওয়েসের পালা।

আরেকটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এভাবে নিজেদের মধ্যে সংঘাত বাঁধানো (সার্কুলার ফায়ারিং স্কোয়াড) সরকারকে বর্তমান বিপদ থেকে উদ্ধার করবে না।

লেবার এমপিরা যা চাইছে তার জন্য সতর্ক হওয়া উচিত বলে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকরা সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের যুক্তি হলো, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা দলকে এমন এক বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলবে যা কনজারভেটিভ পার্টির শাসনের শেষ বছরগুলোতে দেখা গিয়েছিল এবং যা গত বছর শেষ হয়েছিল। একই সঙ্গে এটি এমন একজন নেতাকে প্রতিষ্ঠিত করবে যার নিজের দেশের জনগণের কাছ থেকে সরাসরি কোনো ম্যান্ডেট থাকবে না।

এ ধরনের প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিক বাজারকেও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত সুসম্পর্ককে বিপন্ন করবে বলে সহকর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু কয়েকজন মন্ত্রীসহ অনেকেই সরকার বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে রয়েছে সেটাকে চরম হতাশাজনক পরিস্থিতি বলে মনে করছেন।

এক মন্ত্রী বলেন, এটা ভয়াবহ। মানুষ তাকে (স্টারমার) ঘৃণা করছে। করবিনের শাসনামলের চেয়েও এটা আরো খারাপ। মে মাসের মধ্যে এই পরিস্থিতি কীভাবে টেকসই হবে আমি তা বুঝতে পারছি না।

জনমত জরিপ থেকে জানা যায়, স্যার কিয়ের ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয়। এমনকি আধুনিক জনমত জরিপের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে অজনপ্রিয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও।

এই জরিপগুলো আরো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লেবার পার্টির ভোটারদের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ সমর্থন ধরে রাখতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক এক মন্ত্রিসভা সদস্য তাদের সহকর্মীদের মনোভাবকে এভাবে সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন। অনেকে মনে করেন এটি লেবার সরকারের ও পরিপূর্ণতার মধ্যে একটি পছন্দ।

যতটা তারা আমাদেরকে তাদের কাছে নিখুঁত বলে মনে হওয়া নীতির দিকে ঠেলে দিতে পারেন, ততটাই তারা খুশি হন। কিন্তু আসল পছন্দ আমাদের আর পরিপূর্ণতার মধ্যে নয় বরং আমাদের আর রিফর্ম পার্টির মধ্যে।

সাম্প্রতিক সময়ে রিফর্ম ইউকে দলের উত্থান ডাউনিং স্ট্রিটের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজের সঙ্গে লেবার দলের এই লড়াই প্রজন্ম নির্ধারণী এক লড়াই।

তিনি মনে করেন, সাধারণ নির্বাচনে রিফর্মের কাছে পরাজিত হওয়া কনজারভেটিভদের কাছে হারের চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ হবে।

ফারাজের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার মতো শক্তি ও সামর্থ্য তার এখনও রয়েছে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি। কিন্তু তার অনেক সহকর্মী এটা বিশ্বাস করেন না। গত বছর নির্বাচিত এক লেবার এমপি বলেন, আমরা টোরিদের মতো নই। আমরা এক সংসদীয় মেয়াদে একবারের বেশি নেতা পরিবর্তন করব না।

টিটিএন

Read Entire Article