ভারতের হিমালয় অঞ্চলের লাদাখে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ব্যাপক সহিংসতায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এদিন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপির অফিসে আগুন ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সব মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৪ জন তরুণের, আহত হয়েছে বহু।
সেখানে বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছে জেন জি প্রজন্মের তরুণরা, যারা দীর্ঘদিনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে সরে এসে এবার রাস্তায় নামে আরও তীব্র প্রতিবাদে। স্থানীয় আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশের গুলিতেই প্রাণ গেছে বিক্ষোভকারীদের।
বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় ১৫ দিনব্যাপী অনশন ধর্মঘটের মাঝে, যখন দুই প্রবীণ আন্দোলনকারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সংগঠকরা লেহ শহরে দোকান-পাট বন্ধের ডাক দেন। কিন্তু, তরুণদের একাংশ মনে করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনও লাভ হচ্ছে না—এই বিশ্বাস থেকেই তারা আরও কড়া প্রতিক্রিয়ায় যায়।
২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল (ইউনিয়ন টেরিটরি) হিসেবে আলাদা করা হয় লাদাখকে। তখন থেকেই লাদাখের মানুষের দাবি—রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দাও এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় স্বায়ত্তশাসন প্রদান করো।
লাদাখের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ তালিকাভুক্ত উপজাতি হিসেবে পরিচিত। তাই তারা দাবি করছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের মতো তারাও বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার পাক।
শিক্ষাবিদ ও পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক বলেন, তরুণদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। চাকরি নেই, ভবিষ্যৎ নেই, আর সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটাই সমাজে অশান্তির বীজ।
সরকারের অভিযোগ, ওয়াংচুক জেন জি বিপ্লব এবং আরব বসন্ত-এর মতো শব্দ ব্যবহার করে তরুণদের উত্তেজিত করছেন। যদিও ওয়াংচুক নিজে বলেন, তিনি কখনোই হিংসার পক্ষে নন।
বুধবারের সহিংসতাকে লাদাখের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন বলে অভিহিত করেছেন আন্দোলন সমন্বয়কারী জিগমেত পালজোর।
তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনে মানুষ অতিষ্ঠ। যারা রাস্তায় নেমেছিল, তারা শহীদের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য।
বিক্ষোভ চলাকালীন, আন্দোলনের প্রধান সংগঠন লাদাখ অ্যাপেক্স বডি অনশন ধর্মঘট স্থগিত করে শান্তির আহ্বান জানায়।
লাদাখ ভারতের একটি কৌশলগত এলাকা, যা চীনের সঙ্গে ১ এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার সীমান্ত শেয়ার করে। ২০২০ সালে ভারত-চীন সেনাবাহিনীর সংঘর্ষেও এই এলাকাই ছিল মূল কেন্দ্র।
এখন এই সীমান্তবর্তী এলাকায় অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ভারতের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দিক ওয়াহিদ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত ২০১৯ সালে নিয়েছিল, তারই ফল এখন ঘরে ঘরে আগুন হয়ে ফিরছে। আগে ছিল কাশ্মীর, এখন লাদাখও সরকারের মাথাব্যথা।
সূত্র: আল-জাজিরা
এমএসএম