নোয়াখালী হাসপাতালে কিডনি ইউনিট বন্ধের ঘোষণা, রোগীদের বিক্ষোভ

2 months ago 8

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট বন্ধের ঘোষণার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে রোগী ও স্বজনরা। সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।

কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের ইনচার্জ ডা. মামুন পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, এখানে সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ আসে না। তাই রোগীদের থেকে যৎসামান্য টাকা নিয়ে তাদের সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু এ নিয়ে সাবেক ইনচার্জ ডা. শাহিদুল ইসলাম সাকিব বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালায়। এতে সরকারি বরাদ্দ আসার আগ পর্যন্ত এটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।

তাসলিমা বেগম নামে এক রোগী জানান, প্রতি সপ্তাহে আমার দুইবার কিডনি ডায়ালাইসিস লাগে। এ হাসপাতালে সরকারিভাবে সেবা দেওয়া হয়। মাত্র ৪০০ টাকায় আমি ডায়ালাইসিস সেবা পাচ্ছি। কিন্তু আজ (সোমবার) দুপুর ১২টার মধ্যে হাসপাতাল ছাড়ার নোটিশ দেন কর্তৃপক্ষ। এটি বন্ধ করা হলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার কিডনি রোগীর দুঃখের সীমা থাকবে না।

আবদুল মোতালেব (৫৫) নামে এক স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সেন্টার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় ক্যাথেটর এবং ছয় হাজার টাকায় ফিস্টুলা করতে পারেন রোগীরা। সে ক্ষেত্রে বাহিরের হাসপাতালে এ সেবা পেতে যথাক্রমে ১৫ হাজার এবং ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। ডা. সাবিবের নেতৃত্বে প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকরা এ ডায়ালাইসিস সেন্টার বন্ধের ষড়যন্ত্র করছেন। তাই আমরা এর প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক সেবিকা জানান, ডায়ালাইসিস ইউনিটে ডা. শাহিদুল ইসলাম সাকিব যোগদানের পর থেকে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে অশালীন আচরণ শুরু করেন। রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে চাপ প্রয়োগ করা, নার্সদের সঙ্গে অশোভন ও আপত্তিকর আচরণ করেন এবং রোগীদের মৃত্যু কামনার মতো অমানবিক আচরণও করেছেন। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে তত্ত্বাবধায়ককে অবহিত করেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. শাহিদুল ইসলাম সাকিব এখানের ইনচার্জ থাকাবস্থায়ও রোগীদের থেকে ওই টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতেন। কিন্তু তার অসংলগ্ন কর্মকাণ্ড ও নার্সদের সঙ্গে অশোভন আচরণের কারণে সম্প্রতি তাকে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার থেকে প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে তাকে ঠাকুরগাঁও জেলায় বদলি করা হয়েছে। এরপর তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিজে অভিযোগ দিয়ে এটি বন্ধের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ (বর্তমানে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ) থেকে মেশিন ও যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে একটি আধুনিক কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে নোয়াখালী ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও কুমিল্লার লাকসাম এলাকা থেকে শত শত রোগী এ সেন্টারে কমমূল্য চিকিৎসা সেবা পেয়ে আসছেন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, গত ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানের পর ইউনিটের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা সম্মানহানির অভিযোগ করেছেন। তারা মনে করছেন, মানুষের উপকার করতে গিয়ে তারা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে আমরা এখনই ইউনিটটি বন্ধ করছি না। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত জনবল ও উপকরণ না পেলে ভবিষ্যতে এটি চালানো কঠিন হবে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, বিষয়টি জেনেছি। জনসাধারণের উপকারার্থে যেভাবে ডায়ালাইসিস সেন্টারটি চালানো যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ অন্যায়ভাবে এখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইকবাল হোসেন মজনু/আরএইচ/এএসএম

Read Entire Article