নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের ফুল লজ্জাবতী

13 hours ago 5
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর পাড়ে ফুটেছে লজ্জাবতী ফুল। গোমতী পাড়জুরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এ ফুল। এ ফুলের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাসহ ফুলপ্রেমী ও সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা।  সরেজমিনে দেখা গেছে, লজ্জাবতী ফুলের মোহনীয় সৌন্দর্যে গোমতী পাড় সেজে উঠেছে নৈসর্গিক সাজে। নদীর পাড় ধরে চলাচলের সময় এসব ফুল দেখলে মনে হয় যেন এগুলো ফুল নয়, এ যেন লজ্জাবতীর মাতাল করা হাসি। লজ্জাবতীর হাসির এ নান্দনিক দৃশ্য সত্যিই খুব সুন্দর এবং কাব্যিক। হেমন্তের প্রকৃতি রঙিন হয়ে উঠেছে এ ফুলের চোখজুড়ানো সৌন্দর্যে। জানা গেছে, পাতায় স্পর্শ করলে গুটিয়ে নেওয়ার বৈশিষ্ট্যের জন্য বেশ পরিচিত উদ্ভিদ লজ্জাবতী। এর বৈজ্ঞানিক নাম মিমোসা পুডিকা লিন। লজ্জাবতী হলো প্রায় চারশো প্রজাতির গুল্ম ও লতার একটি গণের নাম, যা লিগিউম জাতীয় ফ্যাবায়েসি পরিবার বা শাখাগোত্রের মিমোসোইডি উপপরিবার বা উপগোত্রের ও মিমোসেসি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এ গণটির নাম এসেছে গ্রিক ভাষার শব্দ মিমোস থেকে। এর পাতা সংবেদনশীল। এজন্য এ উদ্ভিদের প্রতি মানুষের বিশেষ কৌতূহল রয়েছে। আকর্ষণ রয়েছে এ উদ্ভিদের নজরকাড়া বিশেষ ধরনের ফুলের প্রতি।  স্পর্শকাতর এ উদ্ভিদটি স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বেশি জন্মে। এ উদ্ভিদে থোকায় থোকায় ফুল ফোটে। এর ফুলেট রং গোলাপি বা বেগুনি। আকারে ছোট ও অন্যান্য ফুল থেকে দেখতে বেশ আলাদা। এর ফল চ্যাপ্টা, বাঁকা ও লম্বাটে। এই উদ্ভিদের পাতা সরু ও চিকন, অনেকটা তেঁতুল পাতার মতো। উদ্ভিদের পাতা ছোঁয়া মাত্র সংকুচিত হয়ে যায়। লজ্জাবতীর কাণ্ড কাঁটাযুক্ত ও শক্ত। এই উদ্ভিদ খুবই দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এর আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে। তবে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব জায়গায় এটি ছড়িয়ে পড়েছে।  লজ্জাবতী উদ্ভিদটি শুধু লাজুকই নয় বা এর ফুল কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না, এ উদ্ভিদের রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। ভেষজ ওষুধ তৈরিতে এই উদ্ভিদের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে, দাঁতের মাড়ি ক্ষতে, কানের পুঁজে, অর্শ্ব, আমাশয়, হাত-পা জ্বালাপোড়াসহ আরও নানা রোগ সারাতে লজ্জাবতী উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার প্রচলিত ও গুণাগুণ বেশি। তবে কালের বিবর্তনে উপকারী ও সুন্দর ফুলের এই উদ্ভিদটি প্রকৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে। একসময় এই উপজেলার আনাচকানাচে দেখা গেলেও এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। পরিবেশ দূষণ, ঝোপঝাড় পরিষ্কার ও বনাঞ্চল উজারের ফলে ধীরে ধীরে এর বংশবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। তবে নয়নাভিরাম ফুলের সৌন্দর্যের ও উপকারী উদ্ভিদটি প্রকৃতিতে আগের মতো ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। স্থানীয় বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, গোমতী পাড় দিয়ে চলাচলের সময় লজ্জাবতী ফুল আমাদের মুগ্ধ করছে। সবুজের মাঝখানে গোলাপি রঙের ফুলে গোমতী পাড় সেজে উঠেছে। সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় দূরদূরান্তের মানুষও এ ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন। খোরশেদ আলম নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, আমাদের উপজেলায় লজ্জাবতী গাছ খুব একটা চোখে না পড়লেও গোমতী পাড়ে এ গাছের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি। এই গাছে ফুল ফোটায় গাছটি বেশ নজরে পড়ছে। এ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয়রাসহ অনেকেই।  প্রকৃতিপ্রেমী স্কুল শিক্ষক জামাল হোসেন বলেন, লজ্জাবতী উদ্ভিদের ফুল দেখতে বেশ সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। এ ফুলের সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করার মতো সুন্দর। উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় এ উদ্ভিদটি দেখা যায়। এ উদ্ভিদটি এমনিতে দেখা না গেলেও এর ফুলের কারণে সহজেই চোখে পড়ে।  তিনি আরও বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় লজ্জাবতী উদ্ভিদসহ বিভিন্ন উদ্ভিদের সংখ্যা প্রকৃতি থেকে হ্রাস পাওয়ার কারণে দিন দিন প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ছে। এ জন্য প্রকৃতিকে স্বনির্ভর করতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।  ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক (ইউনানি) সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, লজ্জাবতী ফুল অন্যসব ফুল থেকে সৌন্দর্যগুণে আলাদা হওয়ায় এর প্রতি মানুষের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। উপজেলায় উল্লেখযোগ্য হারে উদ্ভিদটি দেখা না গেলেও ফুল হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ে। এ ফুলের সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। তিনি আরও বলেন, লজ্জাবতী উদ্ভিদটির বহু ঔষধি গুণ রয়েছে। উপকারী ভেষজ উদ্ভিদটি দিন দিন প্রকৃতি থেকে হ্রাস পাচ্ছে। এতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেষজ বাগানে এ উদ্ভিদটি সংরক্ষণ করা আছে।
Read Entire Article