পণ্য আটকা পড়লে ডেমারেজ গুনতেই চলে যায় কয়েক চালানের লাভ

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানিতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ছিল ভারত-বাংলাদেশের বন্দরগুলোর অবকাঠামো দুর্বলতা। চলতি বছর থেকে ভারতের অধিকাংশ স্থলবন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ও দেশটিতে পণ্য অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতায় ভুগছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। এসব নিয়ে জাগো নিউজের জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক নাজমুল হুসাইনের তিন পর্বের ধারাবাহিকের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব। স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া খাদ্যপণ্য ভারতের বন্দরে আটকা পড়া এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। ভারতের দিকের অবকাঠামোগত দুর্বলতা, অটোমেশন সুবিধা না থাকাসহ দেশটির খাদ্য নিয়ামক সংস্থা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এফএসএসআই) পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শর্তের জালে পণ্য খালাস নিয়মিত বিলম্বিত হয়। যার ডেমারেজ গুনতে হয় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বিলম্বের কোনো দায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের না থাকলেও মাশুল গুনতে হয় তাদেরই, অর্থাৎ বাংলাদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের। এ দায় কখনো ভারতের আমদানিকারকরা নেন না। এই ডেমারেজ কখনো এত বেশি দিতে হয় যে কয়েক চালানের লাভ চলে যায় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। সব মিলিয়ে নানা জটিলতায় আমাদের খরচ অ

পণ্য আটকা পড়লে ডেমারেজ গুনতেই চলে যায় কয়েক চালানের লাভ

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানিতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ছিল ভারত-বাংলাদেশের বন্দরগুলোর অবকাঠামো দুর্বলতা। চলতি বছর থেকে ভারতের অধিকাংশ স্থলবন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ও দেশটিতে পণ্য অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতায় ভুগছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। এসব নিয়ে জাগো নিউজের জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক নাজমুল হুসাইনের তিন পর্বের ধারাবাহিকের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া খাদ্যপণ্য ভারতের বন্দরে আটকা পড়া এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। ভারতের দিকের অবকাঠামোগত দুর্বলতা, অটোমেশন সুবিধা না থাকাসহ দেশটির খাদ্য নিয়ামক সংস্থা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এফএসএসআই) পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শর্তের জালে পণ্য খালাস নিয়মিত বিলম্বিত হয়। যার ডেমারেজ গুনতে হয় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বিলম্বের কোনো দায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের না থাকলেও মাশুল গুনতে হয় তাদেরই, অর্থাৎ বাংলাদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের। এ দায় কখনো ভারতের আমদানিকারকরা নেন না। এই ডেমারেজ কখনো এত বেশি দিতে হয় যে কয়েক চালানের লাভ চলে যায় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

সব মিলিয়ে নানা জটিলতায় আমাদের খরচ অস্বাভাবিক বেড়েছে। দাম বাড়ায় ভারতীয় ক্রেতারা বিকল্প পণ্য নিচ্ছে। আমাদের ক্রয়াদেশ কমে গেছে। যার প্রধান কারণ বন্দরে জটিলতা।- স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক মঈন উদ্দিন

রপ্তানিকারকরা বলছেন, ভারতে পণ্য পাঠিয়ে প্রতিনিয়ত খালাস জটিলতায় অতিরিক্ত বন্দর চার্জ, স্টোররেন্ট চার্জসহ পরিবহনের বাড়তি ভাড়া গুনছেন তারা। কিছু ক্ষেত্রে পণ্য খালাসে বিলম্ব সপ্তাহ থেকে মাসে গিয়ে ঠেকে। তখন ওইসব চালানের পণ্য পুরোপুরি লোকসানি হয়। আবার অল্প কিছুদিন পণ্য আটকা থাকলে সেটা রপ্তানির প্রতিযোগী হয় না। যে কারণে এখন অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানই ভারতে পণ্য পাঠাতে অনীহা দেখাচ্ছেন।

পণ্য আটকা পড়লে ডেমারেজ গুনতেই চলে যায় কয়েক চালানের লাভ

প্রথম পর্ব: ভারতে খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে পাড়ি দিতে হচ্ছে হাজার কিলোমিটার বেশি পথ

সরেজমিনে জাগো নিউজ ভারতে পণ্য রপ্তানির অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা পরিদর্শন করে। সেখানে কথা হয় ভারতে পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠানগুলোর কাস্টমসের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট ও ভারতে যাওয়া-আসা করা পণ্য পরিবহনের গাড়িগুলোর চালক-কর্মচারীদের সঙ্গে।

আরও পড়ুন
পাটপণ্যে ভারতের নিষেধাজ্ঞা রপ্তানিতে তেমন প্রভাব ফেলবে না
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে নতুন নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশে ভারতের পণ্য রপ্তানি কমেছে ২৮ শতাংশ
ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে অশুল্ক বাধায় খরচ বেড়েছে ২০ শতাংশ

কথা বলে জানা যায়, গত জুন থেকে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে নানা বিধিনিষেধ দিয়েছে। কিছু বন্দর ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি ভারতে পণ্য পাঠাতে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডর্স অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এফএসএসআই) পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু বন্দরে তাদের কোনো টেস্টিং ল্যাব না থাকায় কলকাতা বা বেনারস থেকে সেসব পণ্য পরীক্ষার পরে রিপোর্ট আসা পর্যন্ত পণ্য ছাড় হচ্ছে না। এতে খালাসে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া বাড়ানো হয়েছে নিয়মিত পণ্যগুলোর টেস্টিং ফি-ও।

পণ্য আটকা পড়লে ডেমারেজ গুনতেই চলে যায় কয়েক চালানের লাভ

আগে পণ্য পরীক্ষার ফি ছিল প্রতি পণ্যে ৬ থেকে ৭ হাজার রুপি, এখন সেটা হুট করে ১৩ হাজারেরও বেশি করা হয়েছে। পণ্যপ্রতি এখন ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যে কারণে আমরা ভারতে নিয়মিত পণ্য রপ্তানি বন্ধ রেখেছি।- আকিজ বেকার্স লিমিটেডের এক্সপোর্ট লিড মনির উজ জামান

ভোমরা বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করলে ভারতের পাশে কোনো অটোমেশন সিস্টেম নেই। পণ্য খালাসের জন্য নেই কোনো স্টেশন বা শেড। যে কারণে বেসরকারি স্টেশন ভাড়া করে পণ্য রাখতে হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। লোডিং-আনলোডিং হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। এতে যেমন খরচ বাড়ছে, তেমন পণ্যের মোড়ক ও গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।

পণ্য আটকা পড়লে ডেমারেজ গুনতেই চলে যায় কয়েক চালানের লাভ

এসব কারণে বেনাপোল ও ভোমরা দিয়ে আগে নিয়মিত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগে নিয়মিত প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, এসিআই ফুডস, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, আবুল খায়ের গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, ইস্পাহানি গ্রুপ, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, টি কে গ্রুপ, আকিজ বেকার্স, দেশবন্ধু গ্রুপ, প্রমি ফুড, হাসেম ফুড, স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্ট, জাবেদ ফুড প্রোডাক্ট, বিএসপি ফুড, ইফাদ, বিডি ফুডসহ নানা প্রতিষ্ঠান এসব স্থলবন্দর হয়ে পণ্য রপ্তানি করতো। কিন্তু এখন ওইসব প্রতিষ্ঠানের বেশিভাগই রপ্তানি কমিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন পণ্য রপ্তানি করেনি।

এ বিষয়ে কথা হয় স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক মঈন উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ভারতের সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানি করছে স্টারলাইন। আগে প্রতি মাসে কমবেশি ৩০ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করা হতো। তবে স্থলপথে পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ, নানা ধরনের নতুন নতুন শর্ত ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া ভারতের ওইসব বন্দরের জটিলতার পরে আমাদের কোম্পানির রপ্তানি কমে গেছে।’

কোনো কোম্পানির পাঁচটি গাড়ি ওপারে আটকে গেলে তাদের দিনে ১০ হাজার টাকা ড্যামারেজ যায়। ছয় হাজার টাকা লাগে পার্কিং, এছাড়া ড্রাইভার-হেলপারের খরচ ও অন্য চার্জ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে ওই কোম্পানির কয়েকটি চালানের মুনাফা সেই এক চালানে লোকসান হয়ে যায়।- শামছুর রহমান সিঅ্যান্ডএফ কর্ণধার শওকত হোসেন

তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে নানা জটিলতায় আমাদের খরচ অস্বাভাবিক বেড়েছে। দাম বাড়ায় ভারতীয় ক্রেতারা বিকল্প পণ্য নিচ্ছে। আমাদের ক্রয়াদেশ কমে গেছে। যার প্রধান কারণ বন্দরে জটিলতা।’

পণ্য আটকা পড়লে ডেমারেজ গুনতেই চলে যায় কয়েক চালানের লাভ

আগে ভারতে নানা ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানি করতো আকিজ বেকার্স লিমিটেড। দীর্ঘদিন সে রপ্তানি বন্ধ। ওই প্রতিষ্ঠানের এক্সপোর্ট লিড মনির উজ জামান বলেন, ‘ভারতের এফএসএসআই ও ভারতের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) নানা রুলস ও রেগুলেশন করছে কিছুদিন পরপর। ফলে আমরা যখন আগের নিয়মে পণ্য পাঠাচ্ছি, তখন সেটা অনেক সময় ফেরত আসছে কিংবা বন্দরে আটকা থাকছে। কিন্তু ওইসব নিয়ম সম্পর্কে ভারতের আমদানিকারকরা আমাদের ঠিকমতো জানাতে পারছেন না। ফলে পণ্য পাঠিয়ে বারবার আমরা ঝামেলায় পড়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া বন্দরের খরচ অস্বাভাবিক বাড়িয়েছে ভারত। চালান আটকে থাকার কারণে বিলম্ব মাশুল গুনতে হচ্ছে। আগে পণ্য পরীক্ষার ফি ছিল প্রতি পণ্যে ৬ থেকে ৭ হাজার রুপি, এখন সেটা হুট করে ১৩ হাজারেরও বেশি করা হয়েছে। পণ্যপ্রতি এখন ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যে কারণে আমরা ভারতে নিয়মিত পণ্য রপ্তানি বন্ধ রেখেছি।’

আরও যত সমস্যা

কয়েকজন রপ্তানিকারক জানান, ভারতে পণ্য পৌঁছানোর পরে ওই পণ্যের ল্যাব টেস্টের নামে এফএসএসআই জটিলতা তৈরি করে। তারা পণ্য আনলোড করতে দেয় না। ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সেটা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া গাড়িতে লোড করে অপেক্ষা করতে হয়। এ কার্যক্রম সারতে চলে যায় তিন-চারদিন। ওপারে পেট্রাপোল কিংবা ঘোজাডাঙ্গায় কোনো টেস্টিং ল্যাব নেই। এফএসএসআই কর্মকর্তারা পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে সেটা কলকাতা কিংবা বেনারসের ল্যাবটরিতে পাঠান। সেখান থেকে পরীক্ষা হয়ে আসে রিপোর্ট।

আমরা কলকাতা এফএসএসআইয়ের অফিসে গিয়েছি, তাদের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেছি। সেগুলো সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছিল ভারত। কিন্তু এখনো কিছু হয়নি। সম্প্রতি তারা ঘোজাডাঙ্গা বন্দর উন্নয়নের কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এখনো কাজ শুরু হয়নি।-সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাজ ট্রেডিংয়ের কর্ণধার জাকির হোসেন মিন্টু

এফএসএসআইয়ের জনবল সংকট রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙ্গায় রুটিন শিফটিং ডিউটি করেন। ফলে তাদের অনুপস্থিতিতে পণ্য কোনো বন্দরে প্রবেশ করলে সেটার টেস্টিং কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

পণ্য আটকা পড়লে ডেমারেজ গুনতেই চলে যায় কয়েক চালানের লাভ

ভোমরা কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকছুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওপারে এখনো টিনশেড আধাপাকা বিল্ডিংয়ে তাদের কার্যক্রম চলছে। যে কারণে বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের সময় পণ্য খালাস কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এটাও বড় সমস্যা।’

জানা যায়, টেস্ট রিপোর্ট না আসা কিংবা অন্য যে কোনো কারণে একটি পণ্যবাহী গাড়ি ওপারে আটকালে প্রতিদিন দেড় হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত ড্যামারেজ গুনতে হয়।’

মাকছুদ খান জানান, গত কয়েক মাসে দেশবন্ধু গ্রুপের খাদ্যপণ্য, মজুমদার গ্রুপের রাইসব্রান অয়েলসহ বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য একমাস পর্যন্ত ওপারে আটকা ছিল। তারা সবাই লোকসান করেছেন গাড়ি ও অন্য ডেমারেজ দিতে গিয়ে।

তিনি বলেন, ‘এপারে বা ওপারে যেখানে গাড়ি আটকায়, ক্ষতিপূরণ কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। ভারত যেহেতু পণ্য নেয়, ফলে তারা পণ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোনো দায়িত্ব বা খরচ দেয় না।’

এছাড়া ভোমরা দিয়ে পণ্য যাওয়ার পরে ওপারে ঘোজাডাঙ্গায় অন্য কোথাও পণ্য নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি পাওয়া যায় না। গাড়ি সংকটে গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া।

ভারত-বাংলাদেশ চেকপোস্টে একটি কোম্পানির পণ্য নিয়ে আসা গাড়িচালক শাহজাহান বলেন, একসঙ্গে আমাদের কোম্পানির পাঁচটি গাড়ি ওপারে গিয়েছিল সকালে। কিন্তু গাড়ি না থাকায় তিনটি গাড়ি আনলোড করা যায়নি। সেখানে পণ্য নিয়ে আটকে গেছে।

পণ্য আটকা পড়লে ডেমারেজ গুনতেই চলে যায় কয়েক চালানের লাভ

তিনি বলেন, ‘ওপারে কোনো সরকারি শেড নেই। গাড়ি রাখতে বেসরকারি পার্কিংয়ে ভাড়া গুনতে হয় প্রতিদিন ১২শ টাকা। সেটাও খোলা আকাশের নিচে। ওপারে অধিকাংশ খোলা গাড়ি। আনলোড করতে অনেক সময় কার্টন ও পণ্য নষ্ট হয়, ছিঁড়ে পড়ে যায়।’

শামছুর রহমান সিঅ্যান্ডএফ কর্ণধার শওকত হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন ভোমরা দিয়ে ৩০ থেকে ১০০টির বেশি গাড়ি ভারতে যায়। এগুলোর অর্ধেকও দিনে দিনে ঘুরে আসতে পারে না। ধরুন, কোনো কোম্পানির পাঁচটি গাড়ি ওপারে আটকে গেলে তাদের দিনে ১০ হাজার টাকা ড্যামারেজ যায়। ছয় হাজার টাকা লাগে পার্কিং, এছাড়া ড্রাইভার-হেলপারের খরচ ও অন্য চার্জ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে ওই কোম্পানির কয়েকটি চালানের মুনাফা সেই এক চালানে লোকসান হয়ে যায়।’

কথা হয় প্রাণ-আরএফএল, আকিজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাজ ট্রেডিংয়ের কর্ণধার জাকির হোসেন মিন্টুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা কলকাতা এফএসএসআইয়ের অফিসে গিয়েছি, তাদের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেছি। সেগুলো সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছিল ভারত। কিন্তু এখনো কিছু হয়নি। সম্প্রতি তারা ঘোজাডাঙ্গা বন্দর উন্নয়নের কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এখনো কাজ শুরু হয়নি।’

এপারেও আছে কিছু সমস্যা
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করলে এপারেও কিছু সমস্যা হয় রপ্তানিকারকদের। বন্দরে বিদ্যমান নানা অবকাঠামোগত সংকট ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বাণিজ্যে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরছে না। সাতক্ষীরা থেকে ভোমরা পর্যন্ত ব্যস্ত সড়কের অবস্থা বেহাল। এছাড়া ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ ‘কাস্টম হাউজ’ ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। জমি অধিগ্রহণ হলেও এখনো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এছাড়া জনবল সংকট ও প্রশাসনিক স্থবিরতাও বাণিজ্যের অন্যতম বাধা।

ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্দরে ওয়্যারহাউজ নির্মাণ ও বিভিন্ন ধরনের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যথাযথ যন্ত্রপাতি নেই। পাশাপাশি দুই পারের বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ খুব কম।’

এসব বিষয়ে ভোমরা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগের চেয়ে এ বন্দর এখন অনেক গতিশীল হয়েছে। কাস্টম হাউজের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’

এনএইচ/এএসএ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow