শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দুই কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ও ড. রুমানা ইসলাম পদত্যাগ করেছেন।
অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ও ড. রুমানা ইসলাম এরই মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করেন। শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করার পর গতকাল বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয় কমিশনার মোহাম্মদ মোহসীন চৌধুরী-কে।
এরপর আজ সোমবার বিএসইসির দুই কমিশনার পদত্যাগ করলেন। শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ২০২০ সালের ২০ মে বিএসইসিতে কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন।
অন্যদিকে, ড. রুমানা ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও ২০০৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। তিনি ২০২২ সালের ৮ মে বিএসইসিতে কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন।
করোনা আতঙ্কে ২০২০ সালের শুরুর দিকে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামলে লেনদেন বন্ধ করে দেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেব যোগ দেন আরও তিনজন। এর মধ্যে ছিলেন শেখ শামসুদ্দিন। বিএসইসির দায়িত্ব নিয়ে নতুন কমিশন টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকা শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালু করেন ওই বছরের ৩১ মে।
- আরও পড়ুন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪ শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগ
বাংলাদেশ ব্যাংকে ফিরলেন ডেপুটি গভর্নররা
সালমান এফ রহমানের পদত্যাগের দাবিতে আইএফআইসি ব্যাংকে বিক্ষোভ
বন্ধ থাকা লেনদেন চালু করার পাশাপাশি অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন শিবলী কমিশন। অনিয়মে জড়িত থাকায় একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়। সতর্ক করা হয় সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-কে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসকে জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়। পরবর্তীতে আইসিবিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাতিল করা হয় এক ডজন দুর্বল কোম্পানির আইপিও।
এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের প্রশংসা কুড়ান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম নেতৃত্বাধীন কমিশন। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারেও। করোনা মহামারির মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার।
কিন্তু এরপর বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয় শিবলী কমিশন। সেই সঙ্গে শিবলী কমিশনের বিরুদ্ধে কারসাজি চক্রকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। সব থেকে বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয় দরপতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপের মাধ্যমে।
ফ্লোর প্রাইস দিয়ে একদিকে কারসাজি চক্রকে সুযোগ করে দেওয়া হয়, অন্যদিকে আটকে রাখা হয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছাড়েন।
এরপরও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে আরও চার বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার। সেই সঙ্গে শেখ শামসুদ্দিনের নিয়োগ নবায়ন করা হয়। দ্বিতীয় দফায় চেয়ারম্যান হওয়ার পর আবারও কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন শিবলী নেতৃত্বাধীন কমিশন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে।
এমএএস/এমআরএম/জেআইএম