পদ্মার চরে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক

3 months ago 44

পদ্মার তীরে উপদ্রব বেড়েছে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের (চন্দ্রবোড়া)। গত তিন মাসে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে এ সাপের কামড়ে মারা গেছে অন্তত পাঁচজন। স্থানীয়রা ২০টির বেশি সাপ মেরেও ফেলেছেন। হঠাৎ করে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরিয়ার রহমান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে রাসেলস ভাইপারের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। দুটি ইউনিয়ন পদ্মার ওপারে। উপজেলার আন্ধারমানিক ঘাট থেকে আজিমনগর চরে পৌঁছতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। সোমবার (৩ জুন) সরেজমিন আজিমনগর চরে পৌঁছে মোটরসাইকেলে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দেখা মিলে দেশের সবচেয়ে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের কাজিরকান্দা গ্রামের কৃষিশ্রমিক সামাদ সেখ ধানক্ষেতে কাজ করার সময় সাপটি দেখতে পান। এরপর তার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন লাঠি নিয়ে এসে সাপটি মেরে ফেলে।

পদ্মার চরে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক

ওই গ্রামের আবুবক্কর জানান, অল্পের জন্য সামাদ সেখ প্রাণেরক্ষা পেয়েছেন। একটু বেখালি হলেই হয়তো ছোবল মারতো। সাপ না মেরে কি করবো আমাদেরও তো বাঁচতে হবে।

এসময় জড়ো হন গ্রামের আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ। তাদের সবার মুখেই রাসেলস ভাইপারের আতঙ্কের কথা। ঘর থেকে বের হতেই ভয় পান তারা। ধানাকাটা মৌসুম কিন্তু কৃষিশ্রমিক মিলছে না। ধান ও ভুট্টা ক্ষেতে এ সাপের দেখা মিলছে বেশি।

কাজিরকান্দা গ্রামের ইদ্রিস সেখের ছেলে লাল মিয়া (৩৮) মারা গেছেন রাসেলস ভাইপারের ছোবলে। তিনমাস আগে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় সাপে দংশন করে তাকে। প্রথমে তাকে স্থানীয়ভাবে ঝাঁড়-ফুক করা হয়। এরপর ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। বাড়ির ওঠানেই লাল মিয়াকে কবর দেওয়া হয়েছে। ছোট দুই শিশুকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী।

স্থানীয় কৃষক শমসের আলী জানান, কিছুদিন আগে পাশের গ্রামে তোতা মিয়া নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের হিসাবে তিনমাসে অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন। বেশ কয়েকজন সাপের দংশনে আহতও হয়েছেন। এরমধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এ এলাকায় হাসপাতাল না থাকায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন না সাপে কাটা রোগীরা। পদ্মা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে আসতে আসতেই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সাপ দেখা মাত্র মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলছে।

পদ্মার চরে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক

হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহেরুবা পান্না জানান, অনেককে দেখা যায় সাপে কাটার পর ওঝার কাছে গিয়ে ঝাড়-ফুঁকে সময় নষ্ট করেন। কিন্তু সেখানে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিলে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি আরও জানান, হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো এন্টিভেনম নেই। সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতাও নেই তাদের। কোনো রোগী এলে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরিয়ার রহমান জানান, পদ্মার চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রবের বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সেখানে মাইকিং করাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে কৃষকদের মাঝে গামবুট জুতা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কচুরিপনা বা অন্য কোনোভাবে পদ্মার অববাহিকা ধরেই রাসেলস ভাইপার মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলে পৌঁছেছে। কয়েক বছর বড় বন্যা না হওয়ায় এর বংশবিস্তার হয়েছে বেশি। দেশের সবচেয়ে বিষধর এ সাপ ডিমের পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দিয়ে থাকে।

বি.এম খোরশেদ/আরএইচ/এমএস

Read Entire Article