পদ্মার পানিতে ডুবছে চরের ১৪০০ হেক্টর জমির ফসল, দিশাহারা কৃষক

1 hour ago 2

অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মার পানি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এতে তলিয়ে গেছে উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী লক্ষ্মীকুন্ডা, পাকশী ও সাঁড়া ইউনিয়নের শত শত হেক্টর জমির ফসল। সবজি, আখ ও কলার জমি ডুবে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

এদিকে ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে পদ্মার পানি। এই পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ৮০ মিটার। আর মঙ্গলবার সকালে পানি ছিল ১২.৫২ সেন্টিমিটার।

পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, কামালপুর, চরকুড়ুলিয়া, বিলকেদার, পাকশী ইউনিয়নের চররূপপুর, সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়া ঘাট ও পদ্মার মাঝের বিস্তীর্ণ সাহেবনগর চরের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পদ্মা তীরবর্তী ১৪০০ হেক্টর কলার জমির। এসব কলার জমি থেকে পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে পানি নেমে না গেলে গাছগুলো নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। এছাড়াও এসব এলাকার জমিতে চাল, ভুট্টা, আখ, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ধনিয়া, মুলা, শসা, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দল, গাজরসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ রয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এসব জমির অধিকাংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার দাদাপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, চরকুড়লিয়া ও চররূপপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার কলার বেশিরভাগ জমিতে পানি উঠেছে। অধিকাংশ সবজির ক্ষেতে পানি উঠেছে। কৃষকরা ডুবে যাওয়া ধনিয়া, করলা ও মূলাসহ বিভিন্ন সবজি তোলার চেষ্টা করছেন। যদিও এসব বেশিরভাগ অপরিপক্ব। বাজারজাত করার মতো হয়নি। কৃষকরা নিজেদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে এসব সবজি উঠিয়ে কমদামে বাজারে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি তলিয়ে যাওয়া কলার জমি থেকে অপরিপক্ব কলার ছড়া কেটে আনছেন।

কৃষকরা জানান, ৫ থেকে ৭ বছর পর পদ্মায় এতো পানি বেড়েছে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কলা চাষিরা। চরাঞ্চলের ১৪০০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ রয়েছে। যার বেশিরভাগ জমি এখন পানির নিচে। এছাড়াও সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের শত শত বিঘা জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। তাছাড়াও গরু-মহিষের চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

লক্ষ্মীকুন্ডা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, ২০ বিঘা জমিতে ধনিয়ার আবাদ করেছিলাম। এরমধ্যে ১৯ বিঘা জমির ধনিয়া পানির নিচে। একবিঘা জমির ধনিয়া আছে। ১৫ বিঘা জমির কলার বাগান পুরোটাই ডুবে গেছে। এখন আমরা কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের প্রতি বিঘা ধনিয়ার জমি এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হয়। ১৯ বিঘা জমির ধনিয়া কমপক্ষে ২০-২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হতো। ১৫ বিঘা কলার জমিতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লোকসান হবে।

দাদাপুর গ্রামের কৃষক নয়ন আহমেদ বলেন, আমাদের ইউনিয়নের পদ্মা তীরবর্তী যে চর রয়েছে সেখানে হাজার হাজার কৃষক সফলের আবাদ করে। এবার অতি বর্ষার কারণে এ এলাকার সফল পানিতে ডুবে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ান সেজন্য তাদের প্রতি অনুরোধ রইল।

দাদাপুর গ্রামের কৃষক মুরাদ আলী বলেন, ৫ বিঘা জমির কলা ও ১ বিঘা জমির কাঁচামরিচ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আমার ৫ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মমিন জাগো নিউজকে বলেন, বিগত কয়েকদিন যাবত পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মা তীরবর্তী লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর, বিলকেদার, চরকুড়লিয়া অঞ্চলের কলা, ধনিয়া ও মূলাসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে। দ্রুত বন্যার পানি নেমে গেলে কৃষকদের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে। যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেসব কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাবো।

শেখ মহসীন/এফএ/এমএস

Read Entire Article