কম্বাইন্ড (একক) ডিগ্রি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন হাওলাদার। কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনরত বাকৃবির শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত হিসেবে অভিযুক্ত তিনি।
একই শিক্ষক যিনি কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে রোববার (৩১ আগস্ট) আন্দোলনরত নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত, তিনি সেই একই বিষয়ে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) পবিপ্রবিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। বাকৃবিতে যেখানে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রি মেনে নেওয়া হয়নি সেখানে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) পবিপ্রবিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কম্বাইন্ড (একক) ডিগ্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে বাকৃবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বাকৃবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত অধ্যাপক তোফাজ্জল। তিনি কম্বাইন্ড (একক) ডিগ্রির অনুমোদন দেওয়ার বিপক্ষে বলেই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। ফলে শিক্ষার্থীরা তার শাস্তি চাচ্ছে। আমাদের মতো কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন পবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। তাদের টানা ৩৪ দিনের আন্দোলনের অবসান ঘটে বুধবার। এদিন একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় পৃথক দুটি ডিগ্রিকে একীভূত করে নতুন কম্বাইন্ড (একক) ডিগ্রি ‘বিএসসি ইন ভেট সায়েন্স অ্যান্ড এএইচ’ অনুমোদন দেওয়া হয়। এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন-
- বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা
- বাকৃবির ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের কমিটি
- শিক্ষার্থীদের ২ দাবি মেনে নিলো প্রশাসন, আন্দোলন সাময়িক স্থগিত
তিনি বলেন, পবিপ্রবির সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় অধ্যাপক তোফাজ্জল কাউন্সিলের সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্বাইন্ড (একক) ডিগ্রির পক্ষে মতামত দেন। সভায় উপস্থিত সব সদস্যরা পক্ষে মতান্তর দেওয়ায় পবিপ্রবিতে কম্বাইন্ড (একক) ডিগ্রি বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু বাকৃবি শিক্ষার্থীদের কম্বাইন্ড (একক) ডিগ্রির পক্ষে না থেকে হামলা করেন শিক্ষক তোফাজ্জল। এটি শিক্ষার্থীদের আরও মর্মাহত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাকৃবির পশু পালন অনুষদের একজন শিক্ষার্থী বলেন, একই শিক্ষক যিনি আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত, বুধবার পবিপ্রবির একাডেমিক কাউন্সিলে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির অনুমোদনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন। আমরা এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এটি আমাদের দাবি ও অনুভূতির সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করছে। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি ও মতামত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যাপক তোফাজ্জল স্যার বাকৃবির সিন্ডিকেট মিটিংয়ে থেকে কিছু করতে পারলেন না, উল্টো একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত হিসেবে তিনি অভিযুক্ত। এই শিক্ষক কীভাবে পবিপ্রবিতে একই ইস্যুতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উপস্থিত থাকেন, তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা এতে হতাশ।
বাকৃবির কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন হাওলাদার বলেন, পবিপ্রবির সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) পবিপ্রবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আমি বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রির পক্ষে। তবে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির আমি পক্ষে নাকি বিপক্ষে তা বলতে চাই না। কারণ আমি অন্য বিভাগের অধ্যাপক।
তিনি বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন চলমান রাখুক, এটি চাই না। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানতুল্য। শিক্ষার্থীরা একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আমাদের তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত উল্লেখ করে আমার শাস্তি চাওয়া হচ্ছে। অথচ সেদিন আমাদের তালাবদ্ধ করার কারণে শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র একটু উচ্চবাক্য প্রয়োগ করেছিলাম। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এগুলো সুরাহা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা লিখিত না দেওয়ায় সিন্ডিকেট মিটিং আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ফলে তাদের দাবি আদায়ে তারাই জটিলতা সৃষ্টি করছে। আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের হাতে ন্যস্ত।
এ বিষয়ে বাকৃবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/এমএস