পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম বানিয়ে সফল রাজু

3 months ago 26

সানজানা রহমান যুথী

আমরা পরিবেশর ওপর ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। কিন্তু আমরাই সেই পরিবেশ প্রতিনিয়ত দূষণ করছি। পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বলা যায় কিছু প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কারণেই আমাদের পরিবেশ এখনো বেঁচে আছে। আমাদের মাঝে এখনো অনেক স্বেচ্ছাসেবক আছেন যারা পরিবেশকে দূষিত না করে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছেন পাশাপাশি প্রকৃতিকে রেখেছেন সুরক্ষিত।

এমনই একজন তরুণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হলেন রাকিবুল হাসান রাজু। যিনি বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি কলেজে গনিতে অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ছেন। ছোটবেলা থেকেই রাজু ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। সেই ভালোবাসা থেকেই গনিতে পড়াশোনার পাশাপাশি করছেন কৃষির ওপর ডিপ্লোমা।

রাজুর শৈশবকাল কেটেছে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার সল্লা ইউনিয়নে। বর্তমানে তিনি একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা ও স্বেচ্ছাসেবক। পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম বানিয়ে সফল রাজু। নিজের আয়ের উৎসের পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন এর মাধ্যমে।

উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প জানতে চাইলে, রাজু বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ভেতর চাকরি করব না, চাকরি দেব। এমন ধরনের মানসিকতা গড়ে উঠেছিল। কলেজে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন সমস্যা পর্যবেক্ষণ করে সেগুলোর সম্ভব্য সমাধান করার চেষ্টা করতাম। আর সেখান থেকেই ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা মাথায় আসে। আমি সবসময় চিন্তা করতাম এমন কিছু করা যায় কি না যা দিয়ে একসঙ্গে তিনটা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব (কর্মসংস্থান তৈরি, পরিবেশ রক্ষা, ফান্ড কালেকশন)। সেই ভাবনা থেকেই রাজুর কাগজের তৈরি কলমের কথা মাথায় আসে।’

কাগজের তৈরি কলম দিয়ে ব্যবসা, এই ধারণা কীভাবে আসলো? প্রশ্নের জবাবে রাজু বলেন, ‘একদিন এক ভাইকে দেখি , কাগজের তৈরি কলম তিনি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন। তার এই কাজ আমাকে দারুনভাবে অনুপ্রাণিত করে। সেখান থেকেই কাগজের তৈরি কলম দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ খুঁজে পাই।’

প্রথম দিকে মাত্র রাজু সবার মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাগজের তৈরি কলম উপহার দিতেন এবং সবাই তাকে অনুপ্রাণিত করতেন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজের তৈরি কলম দিয়ে উদ্যোক্তা জগতে প্রবেশ করেন তিনি। কাগজের কলম, রিসাইকেল্ড কাগজের নোটপ্যাড এসব ছাড়াও রাজু আরও কিছু ব্যবসায়িক কাজে যুক্ত আছেন।

বর্তমানে তার অধীনে ১৮ জন কাজ করেন। তিনি শুধু নিজের জন্যই নয়, তরুণ প্রজন্মকে বেকারত্ব থেকে দূর করতে খুবই স্বল্প মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং কাজও শেখান। রাজুর প্রধান লক্ষ্য হলো বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া। এ লক্ষ্যেই তিনি অবিরতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এই ব্যবসায়ে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কলমের শীষ সংগ্রহ করা। শুরুতে সেটা কাছাকাছি পাওয়া কঠিন ছিল, কারণ এই পণ্যটা একদমই নতুন ছিল আমাদের বাজারে। তবে কাগজের তৈরি কলমের বাজার চাহিদা ভালো। বেশিরভাগ অর্ডার এখন আসছে বিভিন্ন সংগঠনের ইভেন্ট ও ক্যাম্পেইনের জন্য।’

যেহেতু এটা একদম নতুন একটি পণ্য, তাই অনেকে প্রথমবার দেখে বেশ অবাক হন ‘এই জিনিস বাংলাদেশে হচ্ছে!’ এমন প্রতিক্রিয়া আসে। তবে প্রোডাকশন খরচ যদি আরও কমানো যায়, তাহলে বিক্রয় আরও অনেক বাড়বে। তখন ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও মানুষ এই কলম বেছে নিতে শুরু করবে। কারণ কাগজের কলম পরিবেশবান্ধব ফলে পরিবেশে প্লাস্টিক এক্সপোজার অনেক কমে যাচ্ছে।’

আরও বড় কথা হচ্ছে, প্রতি কলমের পেছনে একটি গাছের বীজ থাকে, যা মাটি ও পানির সংস্পর্শে গেলে অঙ্কুরোদ্গম হয়। এই ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে বনায়নে পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রাজু বলেন, ‘আমি চাই ভবিষ্যতে সব ধরনের সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক প্রোডাক্টের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পণ্যগুলো ব্যবহার হোক। এটা আমি একার উদ্যোগে করতে পারব না, তাই আমার স্বপ্ন এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে অনেক উদ্যোক্তা একসঙ্গে কাজ করবে পরিবেশ রক্ষার জন্য।’

যেসব তরুণরা পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে রাজু বলেন, ব্যবসায় একদিন বা এক মাসেই সাফল্য আসে না ধৈর্য, অধ্যবসায় আর শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং সেখান থেকেই আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ব্যবসায় লস বলতে কিছু নেই হয় লাভ, না হয় শিক্ষা। অনেকেই পড়াশোনার সময় টিউশনকে একমাত্র আয়ের উৎস মনে করেন। আমি বলব, টিউশন করুন কিন্তু সেই আয় থেকে ছোট ছোট ইনভেস্টমেন্ট করে নিজের একটি উদ্যোগ শুরু করুন। আমি নিজের উপার্জনে মূলধন জোগাড় করেছি, শিখেছি, আর কাজে নেমেছি আপনারাও পারবেন। আল্লাহর রহমত আর নিষ্ঠা থাকলে, পড়ালেখা শেষ করার আগেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।

কেএসকে/জেআইএম

Read Entire Article