দেশের দক্ষিণের পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এখানেই উপভোগ করা যায়। তাইতো এই লীলাভূমিতে গিয়ে সূর্যোদয় নিজ চোখে দেখবেন না এটা কীভাবে হয়। আর সূর্যোদয় দেখতে দেখতেই ট্যুর গাইডরা আপনাকে নিয়ে যাবে কাউয়ার চর এলাকায়। সেখানে লাল কাঁকড়া, বিশাল ম্যানগ্রোভ বন, চোখ জুড়ানো সৈকত, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখে পড়ে যাবে এক ঝাঁক মোটরসাইকেলের বেষ্টনীতে। কাছে যেতেই দেখা মিলবে দুচালা কয়েকটা টিনের খাবার হোটেল। এগুলো দেখতে খুব চাকচিক্য না হলেও এখানের তরুণ উদ্যোক্তা মিরাজ সিকদারের ইলিশ-খিচুরি আপনাকে খাবারের স্বাদের পূর্ণতা এনে দেবে।
কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত কাউয়ারচর নামক স্থানটি। এটি বেশ জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ার কারণে ১২ বছর আগে এখানে ছোট চায়ের দোকান নিয়ে বসেন মিরাজ শিকদার। প্রতিদিন সূর্যোদয় দেখতে পর্যটকদের আগমন বাড়তে থাকায় নতুন খাবার উপহার দেওয়ার জন্য তিনি শুরু করেন ইলিশ-খিচুড়ি বিক্রি। শুরুর পর তিনি এতে লাভের মুখ দেখতে থাকেন। তার দেখাদেখি এখন সেখানে প্রায় ৮-১০টি দোকান রয়েছে।
নতুন খাবারে পর্যটকদের মন রাখতে এক পিস ইলিশসহ খিচুড়ি মাত্র ৫০-৬০ টাকায়, আবার আপনার পছন্দের বড় ইলিশ কিনে সবাই মিলে শেয়ার করেও খেতে পারেন। তারা সঙ্গে দেন মাছের ভর্তা ফ্রি। যা খেয়ে মুগ্ধ হন পর্যটকরা। শুধু দামই নয়, সমুদ্র থেকে নিয়ে আসা জেলেদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তাজা ইলিশ সাজানো থাকে থরে থরে। যার যেটা পছন্দ সেটাই পর্যটকদের সামনে কেটে, মশলা মেখে, ভেজে দেন।
প্রতিদিন ভোর ৫টায় শুরু হওয়া এই খাবার থাকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। এ সময়ে প্রতিটি দোকানে বিক্রি হয় ৮-১৫ হাজার টাকা। যেখানে লাভের পরিমাণ কম হলেও পর্যটকদের চাহিদা এবং সুস্বাদু খাবারের মান থাকে শতভাগ।
কুষ্টিয়া থেকে বেড়াতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, সকালে সূর্যোদয় দেখতে এসে দেখলাম ইলিশ মাছ সাজানো। সমুদ্রের পাশে তাজা ইলিশ সঙ্গে খিচুড়ি সকালবেলা, আসলেই অনেক মজাদার ছিল। সকালের নাস্তাটাও হয়ে গেল। আর সঙ্গে তাজা ইলিশ, নতুন একটা স্বাদ পেলাম।
আব্দুস সোবহান নামের আরেক পর্যটক বলেন, আমরা মোটরসাইকেল ড্রাইভারদের কাছে শুনেছি যে তরতাজা সুস্বাদু ইলিশ এবং খিচুরি পাওয়া যায় সকালে। এখানে আসার পর অনেকগুলো দোকান যাচাই-বাছাই করে দেখলাম যে আমাদের সাধ্যের ভেতর ইলিশ এবং খিচুড়ি পাওয়া যাচ্ছে। আমরা দুটা বড় ইলিশ নিয়েছি। একটা ২৩০ টাকায় একটা ৩৩০ টাকায়। দুটি ইলিশে আমাদের ৮-৯ পিস হবে। আসলে আজকের এই আয়োজনটা এখানে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।
ঢাকা থেকে আসা ফারজানা রহমান বলেন, কুয়াকাটায় ভ্রমণের অংশ হিসেবে কাউয়ার চরে এসে আমরা ইলিশ-খিচুড়ি খুবই সস্তা দামে পেলাম। আমি ৯০ টাকার প্যাকেজ নিয়েছি দুটি মাছ একটি ভর্তা। এরকম সস্তায় আমার এলাকায় খাওয়া অসম্ভব। কম দামের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো এত তাজা মাছ আমাদের এলাকায় কখনোই মেলে না।
ট্যুর গাইড মো. রাসেল হোসেন বলেন, আমরা যখন পর্যটকদের প্রতিটি স্পট ঘুরিয়ে দেখাই তার মধ্যে এটাও অন্যতম। এখানে সূর্যোদয় দেখার পর এই ইলিশ খিচুড়ি খেয়ে পর্যটকরা আনন্দিত হয়।
ইলিশ-খিচুড়ির উদ্যোক্তা সিকদার রেস্টুরেন্টের মালিক মো. মিরাজ সিকদার বলেন, মূলত সাগরের পাড়ে পর্যটকরা সূর্যোদয়ের ঝাউবন, লাল কাঁকড়ার চর দেখতে আসেন। এখানে এসে যদি তারা সমুদ্রের তাজা মাছ খেতে পারেন তাহলে অনেক খুশি হন। সেই জায়গা থেকেই মাছ এবং খিচুড়ি খাওয়ানোর উদ্যোগ নেই। আমার দেখাদেখি অনেকগুলো দোকান এখানে উঠেছে। দোকান বেশি হওয়াতে আমাদের বেচাবিক্রি কমেনি বরং পর্যটকরা দেখে শুনে যাচাই-বাছাই করে খেতে পারছেন।
তিনি বলেন, আমাদের তীরবর্তী এলাকার ছোট ছোট জেলেরা যে মাছগুলো ধরে নিয়ে আসেন সেগুলো আমরা ক্রয় করি। এখানেই ক্রয় করে আবার পর্যটকদের সামনে বিক্রি করে দেই।
আল্লাহর দান রেস্টুরেন্টের মালিক আ. রহমান বলেন, সমুদ্র থেকে জেলেদের নিয়ে আসা ইলিশ, লাক্কা, কোরাল, বাঁশপাতা, চিংড়িসহ ১০-১৫ আইটেমের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যাবে আমাদের কাছে। এগুলো আমরা স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে সংগ্রহ করে রাখি। পরে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করি। এখানে এসে পর্যটকদের সময় কাটে শতভাগ আনন্দ উল্লাসে।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের আওতাধীন ৫০ জন্য টুরিস্ট সার্ভিস দিয়ে থাকেন। আমরা পর্যটকদের কাছে কাউয়ার চরের ইলিশ-খিচুড়ির কথা জানালে তারা সেখানে গিয়ে খাবার পেয়ে খুশি হন। আমরা এটাকে অনেকটা সেবা হিসেবে দেখছি।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/জেডএইচ/এএসএম