পর্যটনে অচলাবস্থা, ১০ দিনে ক্ষতি আড়াইশ কোটি টাকা

3 months ago 28

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কক্সবাজারের পর্যটনে অচলাবস্থা চলছে। ১৭ জুলাইয়ের পর দেওয়া আগাম সব বুকিং বাতিল করেছেন পর্যটকরা। আগামী পাঁচ দিনেও কোনো বুকিং নেই। এতে সৈকতকেন্দ্রিক পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ পর্যটকশূন্য।

এ অবস্থায় পর্যটন শিল্পে প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকার ক্ষতি গুনছেন ব্যবসায়ীরা। গত ১০ দিনে এ শিল্পে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। একদিকে ক্ষতি অন্যদিকে বাড়ছে দেনার দায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এ ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়বে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর পর গত ১০ দিনে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা।

আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি পর্যটক সেবায় রয়েছে রেস্তোরাঁ, নানান পরিবহন, শামুক-ঝিনুক, শুঁটকি, ইজিবাইক, ঘোড়া, ফটোগ্রাফার, কিটকট, ওয়াটার বাইক এবং ভাসমান হকারসহ ভিন্ন রকম ব্যবসা। এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ মানুষ। চলমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা এবং লাবনী পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক চালক ও ঘোড়াওয়ালারা অলস সময় পার করছেন। পর্যটকহীন খালি পড়ে আছে কিটকট চেয়ারগুলো।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের হিসাব বিভাগ প্রধান মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘স্টাফদের বেতন, জ্বালানি বিল, হোটেল অপারেশন, ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ, মেইনটেন্যান্সসহ সব সাইড মিলিয়ে প্রতিদিন আমাদের প্রায় ১৫ লাখ টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। সে হিসেবে গত ১০ দিনে দেড় কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।’

ওশান প্যারাডাইস কক্সবাজার অফিসের বিপণন কর্মকর্তা ইসতিয়াজ সোমেল বলেন, চলতি মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত ভালোই বুকিং ছিল। দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব বুকিং বাতিল করেছেন পর্যটকরা। ফলে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে আমাদের।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘চলমান অস্থিরতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কক্সবাজার পর্যটন শিল্প। দরিয়ানগরের পাঁচ শতাধিক হোটেলে-গেস্টহাউজের ম্যানেজমেন্ট ব্যয় পুষিয়ে নিতে ব্যবসা বন্ধ রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমরা যখন একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি তখনই একটা খারাপ পরিস্থিতি সামনে আসে। এটি পর্যটন শিল্পের জন্য চরম উদ্বেগের।’

কথা হয় কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমিতিভুক্ত ১২০টি রেস্তোরাঁর মধ্যে ১০০টির মতো বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের সমিতির বাইরে রয়েছে আরও ৩০০টির মতো। ছোট-বড় সব রেস্তোরাঁ হিসেব করলে গত ১০ দিনে শুধু রেস্তোরাঁ ব্যবসায় অর্ধশত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে লোকসান কমাতে শ্রমিক ছাঁটাই করা ছাড়া মালিকপক্ষের আর কোনো উপায় থাকবে না।

‘আন্দোলন শুরুর পর থেকে কক্সবাজার ছেড়েছেন পর্যটকরা। যারা আটকে ছিলেন তাদের অনেকে বিলও পরিশোধ করতে পারেননি। সবশেষ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীর পাহারায় বাকিরাও ফিরে গেছেন। বলতে পারেন কক্সবাজার এখন পর্যটকশূন্য। প্রতিদিন যে ক্ষতি হচ্ছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় দেখছি না’, বলছিলেন কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, হঠাৎ করে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে কক্সবাজারে আটকা পড়েন পর্যটকরা। সেনাবাহিনীর পাহারায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। আশা করছি শিগগিরই সবকিছু স্বাভাবিক হবে।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/এমএস

Read Entire Article