পশ্চিমবঙ্গে যুবকের আত্মহত্যা ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক

8 hours ago 6

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) চালু হলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যেতে পারে, সেক্ষেত্রে ‘বিদেশি’ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং দেশ ছাড়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন এক ব্যক্তি। প্রদীপ কর নামে ৫৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আগরপাড়া ৪ মহাজাতিনগর এলাকায়।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে তার ঘর থেকে ঝুলন্ত উদ্ধার করা হয়। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনাটি সামনে আসার পর এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে, পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, প্রদীপ কর তার ছোট ভাই ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতেন। সোমবার রাতে খাওয়া-দাওয়া করে তিনি নিজের ঘরে ঘুমাতে যান। মঙ্গলবার সকালে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ভাইয়ের স্ত্রী প্রতিবেশীদের ডাকেন। এরপর ঘর খুলতেই দেখা যায়, তিনি দড়িতে ঝুলছেন। পরে খবর পেয়ে খড়দা থানার পুলিশ তার দেহ উদ্ধার করে।

পরিবার বলছে, এনআরসি নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কিত ছিলেন প্রদীপ কর। সোমবার ভারতের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এসআইআর চালুর ঘোষণার পর তিনি আরও বিচলিত হয়ে পড়েন। যদিও এমন কোনো বিপর্যয় নেমে আসবে বলে পরিবারের কারও ধারণা ছিল না। তারা ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু সকাল হতেই পরিবারের সদস্যরা মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হন। তার ঘর থেকে উদ্ধার হয় একটি ডায়েরি, যেখানে লেখা ছিল—‘আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।’

বিষয়টি নিশ্চিত হতেই এদিন বিকেলে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই ঘটনাটি উল্লেখ করে শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তিনি লেখেন, ‘৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ কর এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি একটি চিরকুট রেখে গেছেন—যেখানে লেখা আছে, “আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।”

আত্মহত্যার জন্য বিজেপিকে দায়ী করে মমতা লেখেন, ‘বিজেপির ভয় ও বিভাজনের রাজনীতির এর চেয়ে বড় অভিযোগ আর কী হতে পারে? বছরের পর বছর ধরে বিজেপি কীভাবে এনআরসির হুমকি দিয়ে নিরীহ নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, মিথ্যা ছড়িয়েছে, আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং ভোটের জন্য নিরাপত্তাহীনতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, তা ভাবতেই আমার ভয় লাগে। এই মর্মান্তিক মৃত্যু বিজেপির বিষাক্ত প্রচারণার প্রত্যক্ষ পরিণতি। যারা দিল্লিতে বসে জাতীয়তাবাদ প্রচার করে, তারা সাধারণ ভারতীয়দের এমন হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে যে, তারা নিজেদের দেশেই মারা যাচ্ছে এই ভয়ে যে তাদের “বিদেশি” ঘোষণা করা হবে।’

মমতা আরও লেখেন, ‘আমি দাবি করছি, কেন্দ্রীয় সরকার এই নির্মম খেলা চিরতরে বন্ধ করুক। বাংলা কখনো এনআরসিকে অনুমতি দেবে না এবং কাউকে আমাদের জনগণের মর্যাদা বা স্বত্ব কেড়ে নিতে দেবে না। আমাদের মাটি মা, মাটি ও মানুষের—ঘৃণার উপর ভর করে এমনদের নয়। দিল্লির জমিদারদের এই কথাটি স্পষ্টভাবে শুনতে দিন: বাংলা প্রতিরোধ করবে, বাংলা রক্ষা করবে এবং বাংলা জয়ী হবে।’

এদিন বিকেলে তার বাড়িতে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং স্থানীয় পানিহাটির তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নির্মল ঘোষ। তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সব রকম সহায়তার আশ্বাস দেন। মন্ত্রীর দাবি, মৃত ব্যক্তি অবিবাহিত এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তিনি এনআরসি নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন; উপরন্তু গতকাল ঘোষণার পর থেকে আরও ভেঙে পড়েছিলেন।

বিকেলে তার বাড়িতে যান ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে আমরা যা জেনেছি, তা হলো—এনআরসি নিয়ে সর্বত্র যে কথাবার্তা চলছে, তা প্রদীপ করকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও চিন্তিত করেছিল। তাছাড়া সোমবার পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘোষণার পর তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। আজ সকালে তার ঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ইতিমধ্যেই সেটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।’

পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তা অনুযায়ী প্রদীপ কর ভারতের জন্মগ্রহণকারী নাগরিক; তার বাবা হয়তো বাংলাদেশের জন্মগ্রহণকারী ছিলেন। গোটা ঘটনার সত্যতা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।’

ডিডি/কেএএ/

Read Entire Article