দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় আরেকধাপ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে ঢাকায় ডিজেল পরিবহনের মাধ্যমে এ অগ্রগতি অর্জন করে দেশের পেট্রোলিয়াম জ্বালানি আমদানি, পরিশোধন এবং বিপণন নিয়ন্ত্রণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি। বিপিসির আশা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহনের মাধ্যমে বছরে বর্তমানের চেয়ে ২৩৬ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হবে। ইতোমধ্যে পাইপলাইন জ্বালানি পরিবহন শুরু হয়েছে।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় মাসে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা মূল স্থাপনা থেকে নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লার গোদনাইলে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ডিপোতে ৪৮ হাজার ২শ মেট্রিক টন জ্বালানি পরিবহন করা হয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বিপিসির তথ্যমতে, গত ২২ জুন পরীক্ষামূলকভাবে পাইপলাইনে ডিজেল পরিবহন কাজ শুরু হয়। ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২শ টন ডিজেল গোদনাইলের তিন ডিপোর ট্যাংকে সরবরাহ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে পাইপলাইনে তেমন ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বিপিসির নতুন গঠিত কোম্পানি পাইপলাইন ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসিপিএলসি) ও প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা জ্বালানি তেল পাঠানোর বিষয়টি তদারকি করছেন।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বছরে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহের সক্ষমতাসহ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জ্বালানি পরিবহনের সিস্টেম লস কমানো, নৌপথে তেল পরিবহনের বিপুল খরচ সাশ্রয়সহ দ্রুততম সময়ে তেল পৌঁছানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার ফতুল্লা পর্যন্ত আড়াইশ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।
পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের এই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে অনুমোদন পায়। শুরুতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরু করতেই ২০২০ সাল লেগে যায়। পরে প্রথম দফায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় আবারও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। বিপিসির এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়।
বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে সরবরাহ করা হবে ২৭ লাখ টন ডিজেল। পাইপে পরিবহন শুরু হলে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। প্রকল্পের নথিতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর প্রকল্প থেকে ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুয়েল, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ আরও কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। এতে প্রতিবছর সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। আগামী ১৬ বছরের মধ্যে প্রকল্পের বিনিয়োগ উঠে আসবে।
বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশনস) মণি লাল দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে ডিজেল পরিবহন করা হচ্ছে। এটি জ্বালানি নিরাপত্তায় পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের বড় অর্জন। এর ফলে সড়ক ও নৌপথে জ্বালানি পরিবহনের জটিলতা ও ঝুঁকি দুটোই কমে আসবে। সিস্টেম লস কমে যাবে। সবমিলিয়ে প্রকল্পের হিসেব মতে পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহনের ফলে বছরে ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বিপিসির।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয়েছে ৬৭ লাখ টন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ডিজেল। ঢাকা বিভাগেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনের জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহৃত হয় প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে। খরচ আর ভোগান্তি কমাতেই এ পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে।
এমডিআইএইচ/এমএএইচ/এএসএম