পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যোগ দিতে পারে আরব দেশগুলো
পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধু দুটি দেশের জন্য নয়, বরং বৃহত্তর আরব অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোয়ও সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে মন্তব্য করে জানান, এই চুক্তিতে অন্যান্য আরব দেশ যোগ দিতে পারবে এবং এ বিষয়ে কোনো বাধা নেই। খবর ডন-এর।
এই চুক্তির মূল বৈশিষ্ট্য হলো, যদি কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ ঘটে, তবে তা উভয় দেশের উপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ, এক দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্য দেশের প্রতিক্রিয়াও স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রিয়াদের আল ইয়ামামাহ প্রাসাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান স্বাক্ষর করেন কৌশলগত এই পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে।
জিও নিউজের এক অনুষ্ঠানে আসিফকে প্রশ্ন করা হয়, চুক্তিতে আরও আরব দেশ যোগ দিতে পারবে কি না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি এর সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারব না, তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি দরজা বন্ধ নয়। চুক্তিতে এমন কোনো ধারা নেই যা অন্যকোনো দেশের অংশগ্রহণকে বন্ধ করে দেয়, অথবা পাকিস্তানকে অন্য কারও সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করতে বাধা দেয়।’
আসিফ আরও বলেন, তিনি সবসময় ন্যাটোর মতো একটি প্রতিরক্ষামূলক জোটের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ৪০-৫০ বছরের মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এ অঞ্চলের দেশ এবং জনগণ, বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠী, তাদের অঞ্চল, দেশ এবং জাতিকে একসাথে রক্ষা করার মৌলিক অধিকার রাখে। এই চুক্তি সেই অধিকারকে সুরক্ষা দিচ্ছে।’
চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের পারমাণবিক সম্পদ অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে আসিফ জানান, ‘আমাদের যা আছে এবং যা সক্ষমতা আমাদের কাছে রয়েছে, তা এই চুক্তির আওতায় প্রাপ্য হবে। তবে পাকিস্তান একটি পারমাণবিক রাষ্ট্র হওয়ার পর থেকে কেউ কখনও আমাদের দায়িত্বশীল পারমাণবিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি।’
তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, এই চুক্তি কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নয়। এটি মূলত ন্যাটোর মতো একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা, যা সদস্য দেশগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি শুধু পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে না, বরং এটি উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা কাঠামোয় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। চুক্তির দরজা খোলা থাকায় অন্যান্য আরব দেশও ভবিষ্যতে এতে যোগদান করতে পারে, যা পুরো অঞ্চলের সামরিক সমন্বয় ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলবে।
অন্যদিকে, পারমাণবিক সক্ষমতার বিষয়টি চুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি সৌদি আরবের জন্য প্রয়োজনে ‘সহজলভ্য’ হতে পারে—এটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের প্রথম সুনির্দিষ্ট স্বীকৃতি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি ভারসাম্যের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।