পাকিস্তানে অবৈধভাবে বসবাসকারী আফগান শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের সময়সীমা সোমবার (৩১ মার্চ) শেষ হয়ে গেছে। যার পর থেকে মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে বিতাড়ন প্রক্রিয়া। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, প্রায় ৩০ লাখ আফগান শরণার্থীকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
খাইবার পাখতুনখোয়া বিভাগের স্বরাষ্ট্র বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে আফগান শরণার্থীদের আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ৩১ মার্চ পর্যন্ত শরণার্থীদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল। খবর জিও নিউজ।
তালেবান সরকারের অনুরোধ সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের প্রশাসন গত সপ্তাহে এই সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি। সে সঙ্গে খাইবার পাখতুনখোয়ায় বসবাসরত আফগান শিক্ষার্থীদের তথ্য চেয়ে প্রাদেশিক সরকারকে নোটিশও পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দুই দশকের আফগান যুদ্ধকালে লাখ লাখ আফগান শরণার্থী প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর, আরও কয়েক লাখ আফগান পাকিস্তানে প্রবেশ করেন।
বিশেষ করে ২০২১ সালে ন্যাটো সমর্থিত আফগান সরকারের পতনকালে এক লাখ ২০ হাজার আফগান শরণার্থী পাকিস্তানে নিয়ে আসে যৌথবাহিনী। যদিও পশ্চিমা দেশগুলো তাদের দ্রুত অভিবাসন নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছিল, তারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি এবং এসব শরণার্থী পাকিস্তানেই রয়ে গেছে।
পাকিস্তানের দাবি, আফগানিস্তানের ভূখণ্ড থেকে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান সরকার এই পরিস্থিতির উন্নতি সাধনের জন্য আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শেহবাজ শরিফ প্রশাসন আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরানোর অভিযানে নামলে, মানবাধিকার গোষ্ঠী, তালেবান সরকার ও জাতিসংঘ থেকে তীব্র সমালোচনা এলেও পাকিস্তান তা অব্যাহত রাখে।
এদিকে গত ১৮ মাসে প্রায় ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৯৭২ আফগান নাগরিক পাকিস্তান ছেড়ে চলে গেছে। অপরদিকে পাকিস্তান দাবি করছে, দেশটিতে এখনো ২১ লাখ আফগান শরণার্থী রয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৪ জনের কাছে আফগান নাগরিক হিসেবে প্রমাণপত্র রয়েছে, আর ৮ লাখ ৭ হাজার ৪০২ জনের কাছে আফগান নাগরিক কার্ড (এসিসি) রয়েছে।
এ বিষয়ে আফগান তালেবান সরকার জানিয়েছে, তারা চায় শরণার্থীরা মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফিরে আসুক। আফগানিস্তানের শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল মুত্তালিব হাক্কানি অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তান জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বা তালেবান সরকারকে অবহিত না করেই একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একতরফাভাবে শরণার্থীদের বিতাড়িত করা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করবে এবং একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠানো উচিত যাতে তারা মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফিরতে পারে।