পাচারের শিকার যশোরের জাফর এখন ইউক্রেনের রণাঙ্গনে!

2 hours ago 4

স্বপ্ন ছিল সাইপ্রাসে যাবেন। এজন্য ঘরও ছাড়েন। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করতে হচ্ছে যশোরের যুবক জাফর হোসেনকে। পাচারের শিকার হয়ে তাকে এই পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য হওয়া জাফর হোসেন যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের সরদারপাড়ার খায়রুল সরদারের ছেলে। সম্প্রতি ফোনে পরিবারকে পাচার ও তার বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়েছেন জাফর। যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যু আতঙ্কে বাড়ি ফেরার আকুতি জানিয়েছেন তিনি। যুদ্ধের পোশাক পরিহিত একটি ছবি পাঠিয়েছেন জাফর।

জাফরের এই করুণ পরিণতিতে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন তার মা হাসিনা খাতুন ও স্ত্রী খাদিজা খাতুন। তার শিশু দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

ছেলের বরাতে বাবা খায়রুল সরদার জানান, পাঁচ মাস আগে ঢাকার একটি এজেন্সির মাধ্যমে সাইপ্রাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন জাফর হোসেন। এজন্য তাকে দিতে হয় ৯ লাখ টাকা। কিন্তু প্রতারণা করে দালালচক্র তাকে প্রথমে সৌদি আরবে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে থাকতে হয় দুই মাস। এরপর নেওয়া হয় দুবাই। তারপর তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখন রাশিয়ায় রয়েছেন জাফর। রাশিয়ায় যাওয়ার পর বলা হয়, সেনাদের কাপড় পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু তাকে যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করা হচ্ছে।

খায়রুল সরদার বলেন, ‘এখন ছেলে কান্নাকাটি করছে। সে জানিয়েছে, যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশিদের একজন মারা গেছে। আরেকজন আহত হয়েছে। আমার ছেলে এখন বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছে। না হলে তার মৃত্যু হবে বলে জানিয়েছে।’

এদিকে স্বামীর চিন্তায় কেঁদেই চলেছেন জাফরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী অনেক কষ্টে আছে। তাকে ফিরে পেতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে বলেছে, আমার সন্তান দুটোর তুমি দেখে রেখো। সরকারের কাছে একটাই দাবি, স্বামীকে ফিরে পেতে চাই।’

পাচারের শিকার জাফরের বাবা-মায়ের দাবি, মামাতো ভাই মাহাবুবুর রহমানের মাধ্যমে ঢাকার এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাদের।

তবে ব্ষিয়টি অস্বীকার করেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকার হাজি ক্যাম্প এলাকার তামান্না নামের এক নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বনানীর ৪ নম্বর রোডের হাসান এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে গেছেন জাফর।

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘এজেন্সিতে জাফরের পাসপোর্ট প্রথমে জমা দেওয়া হয় সাইপ্রাসে যাওয়ার জন্য। সাইপ্রাসের ভিসা না হওয়ায় দুই বছর পর বলে, রাশিয়ায় লোক যাচ্ছে, সেখানে পাঠাবে। তখন আমরা বলি, রাশিয়া যুদ্ধের দেশ। ওই জায়গাতো নিরাপদ নেই। তারা (এজেন্সি) বলে, নিরাপদ আছে। ওই জায়গায় ক্লিনারের কাজ করবে। যুদ্ধের কাহিনী ওরা দেখতে পারবে না এবং জানবেও না। এভাবে নিয়ে যাওয়ার পর এখন বিপদে পড়েছে। তারা এখন অস্ত্র হাতে ট্রেনিং দিয়েছে। জাফর মাটির নিচে বাংকারে আছে। এখন সে জীবিত আছে নাকি মৃত কোনো খোঁজখবর পাচ্ছি না।’

তিনি আরও জানান, জাফরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

মিলন রহমান/এসআর/জেআইএম

Read Entire Article