পাঠ্যবইয়ের পরতে পরতে এতদিন ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের বন্দনা। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন নিয়েও ছিল বিস্তর পাঠ। শেখ হাসিনাকেও উপস্থাপন করা হয় ‘অপ্রতিরোধ্য শক্তি’ হিসেবে। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তার পতনের পর আমূল বদলে যাচ্ছে পাঠ্যবইয়ের সেই চিত্র।
ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে বন্দনার পরিবর্তে হাসিনার নামের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জুটেছে স্বৈরাচার, গণহত্যাকারী তকমা। রাজনীতির মাঠ, খবরের কাগজ ছাড়িয়ে পাঠ্যবইয়ের পাতায় পাতায় এখন হাসিনার স্বৈরতন্ত্র, উন্মত্ততা ও গণহত্যার নৃশংসতা। শিক্ষার্থীরা যখন বইয়ের এ অধ্যায়গুলো পড়বে, তাদের চোখে ভেসে উঠবে দেশের রক্তাক্ত এক ইতিহাস।
জানা যায়, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রত্যেক শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে একটি করে অধ্যায় রাখা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ে এ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ অধ্যায় রয়েছে। যেখানে এ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলন, শেখ হাসিনার সহিংস দমননীতি ও দেশ ছেড়ে পালানোর ইতিবৃত্ত বর্ণনা করা হয়েছে। এসব গল্পে হাসিনার সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনামল, নির্বাচনকে ‘ডামি ও রাতের ভোট’ এবং শাসক হিসেবে তাকে ‘স্বৈরাচার ও গণহত্যাকারী’ এবং ‘চোরতন্ত্র’ কায়েমকারী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ আগস্ট জাতীয় শিক্ষাক্রম কমিটির (এনসিসি) সভায় এ অধ্যায়গুলো পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বরং যেসব গল্প-প্রবন্ধে শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার, তার পালানোর ইতিহাস নেতিবাচকভাবে বর্ণনায় কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে সভায় প্রশ্ন তোলা হয়। একই সঙ্গে এসব গল্পেও হাসিনাকে চরম স্বৈরাচার, উন্মত্ত ও গণহত্যাকারী হিসেবে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বৈরতন্ত্র কায়েমের পথে তত্ত্বাবধায়ক বাতিল ও রাতের ভোট
ষষ্ঠ থেকে নবম-দশমের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরাচার হয়ে ওঠার পেছনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, ডামি নির্বাচন, রাতের ভোটের বিষয়গুলো মুখ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে ‘স্বাধীন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান’ শিরোনামের পাঠ্যে বলা হয়েছে, ‘১৯৯৬ সালে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান পাস হলে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ২০১১ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলে গণতন্ত্র পুনরায় বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে ক্রমাগত অধিকার সংকোচন, বিচারিক ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুম-খুনের মাধ্যমে বিরোধীমত দমন এবং সীমাহীন দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে অকার্যকর করার মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হয়।’
বিস্ময়কর মুন্সিয়ানায় রচনাটিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সুকৌশলে গোপন করা হয়েছে। এ রচনা পড়ে একদমই বোঝার উপায় নেই যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল ‘শতাব্দীর ঘৃণ্যতর ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার’ বিরুদ্ধে। এতে জুলাইয়ের খণ্ডিত চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।- অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়া
অষ্টম শ্রেণিতে ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গণঅভ্যুত্থান’ শিরোনামের পাঠ্যে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলকে ফ্যাসিবাদী শাসন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। এ শাসনের মূল ভিত্তি ছিল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দমন-পীড়ন। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনগুলো ছিল এ শাসনের অনুঘটক, যার মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।...এ শাসনব্যবস্থায় একদলীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে শেখ হাসিনা ও তার দলের বাইরে অন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তির স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগও ছিল না।’
আরও পড়ুন
- পাঠ্যবইয়ে স্বমহিমায় জাতীয় বীরেরা, খুশি শিক্ষক-অভিভাবক
- পাঠ্যবইয়ে আ’লীগ ‘সবচেয়ে বড় দল’, বিএনপির জন্ম ‘সামরিক শাসনামলে’
- এক বছরে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা কমেছে ১০ কোটি
- দ্বিগুণ হচ্ছে প্রাথমিকে উপবৃত্তির টাকা, যোগ হচ্ছে আরও সুবিধা
নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ‘স্বাধীন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান’ নামে একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। এতেও ফ্যাসিবাদ কায়েমে শেখ হাসিনার প্রথম ধাপ হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়ে শেখ হাসিনা স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষা থেকে ক্রমাগত কর্তৃত্ববাধী হয়ে ওঠে এবং বিরোধীদের ওপর দমন-নিপীড়ন, দুর্নীতির প্রসার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল করার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠে।’
একই অধ্যায়ে আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে পূর্বরাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা এবং ২০২৪ সালে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার রোডম্যাপ প্রণয়ন করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু জনগণ তাদের চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার এ নীলনকশা প্রত্যাখ্যান করে।’
হাসিনাকে স্বৈরাচার ও গণহত্যাকারী ‘আখ্যা’
ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক পাঠগুলোতে ঘুরে-ফিরে হাসিনার নাম এলেই তার আগে-পরে স্বৈরাচার, গণহত্যা, বেপরোয়া, স্বৈরতন্ত্র শব্দগুলোর বহুল ব্যবহার দেখা গেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের পাঠ্যে বলা হয়েছে, ‘...আন্দোলন দমনে হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম আকরাম, ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ওমর ফারুক এবং ঢাকায় দুজন ছাত্র শহীদ হলে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন সারাদেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন দমনে সরকার বেপরোয়া গণহত্যা শুরু করলে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে।…’
আমাদের সম্পাদনা পরিষদ রয়েছে। প্রধান সম্পাদকের নেতৃত্বে তারা কাজ করছেন। আমার জায়গা থেকে আমি মতামত দিয়েছি। এনসিসির বৈঠকেও যার যার জায়গা থেকে মতামত দিয়েছেন। সর্বসম্মতভাবে কিছু পাঠ্য যুক্ত হচ্ছে।- অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী
সপ্তম শ্রেণির ‘বাংলাদেশে গণঅন্দোলন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান’ শিরোনামের পাঠ্যে শেখ হাসিনার নামের আগে তিনবার ‘স্বৈরাচারী’, নামের শেষে দুবার ‘ফ্যাসিবাদি শাসক’ ও একবার গণহত্যাকরী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির বইয়ে ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গণঅভ্যুত্থান’ শিরোনামে লেখায় শেখ হাসিনাকে একবার ফ্যাসিস্ট, একবার গণহত্যাকারী ও একবার স্বৈরাচারী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া নবম-দশমের বইয়ে একাধিকবার শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী শাসক, গণহত্যার নির্দেশদাতা ও স্বৈরশাসক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
হাসিনার পালানোর ‘ইতিহাস’
প্রত্যেকটি অধ্যায়ে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে লেখা পাঠ্যে শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। নবম-দশমের বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, ‘...আন্দোলন দমাতে সরকার মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করতে থাকে। শত শত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা আন্দোলনে শাহাদত বরণ করতে থাকে। সরকার আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনার সরকার যত বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে থাকে, মানুষ তত বেশি আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।’
অষ্টম শ্রেণির বইয়ে লেখা হয়েছে, ‘...গণআন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনা’। সপ্তমের বইয়ে লেখা হয়েছে, ‘...৫ আগস্ট সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করলে গণভবন অভিমুখে বিক্ষুব্ধ জনতার ঢল নামে। ফলে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি ভারতে পালিয়ে যান।’ ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে হাসিনার পালানোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে ‘...হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটে। জনগণের তোপের মুখে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।’
খণ্ডিত বর্ণনা নিয়ে আপত্তি-বাগবিতণ্ডা
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘আমাদের নতুন গৌরব গাঁথা’ প্রবন্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের খণ্ডিত চিত্র তুলে ধরার অভিযোগ ওঠে জাতীয় শিক্ষাক্রম কমিটিতে (এনসিসি)। সভায় এনসিসির সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া এ প্রবন্ধের অসঙ্গতি সংশোধনের প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও বাস্তব চিত্র বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অপরাধী ও অনুঘটকদের নাম এবং কার্যকলাপ চতুরতার সঙ্গে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। গদ্যে ব্যবহৃত কিছু শব্দ পরিবর্তনেরও দাবি জানিয়েছেন প্রস্তাবকারী। যেমন—‘শাসক’, ‘দুর্বৃত্তবাহিনী’, ‘তার আছে দলীয় বাহিনী’ ও ‘আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা’ শব্দগুলোর পরিবর্তে যথাক্রমে ‘স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা’, ‘আওয়ামী লীগ’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী’ ব্যবহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ পাঠ্যগুলো কারও একক লেখা নয়, একচোখে দেখারও সুযোগ নেই। নির্মোহভাবে বর্ণনা থাকতে হবে, বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে পাঠ্যগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের শেখানোর প্রক্রিয়াটা খুব সাবধানতার সঙ্গে ঠিক করতে হবে।- অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান
জানতে চাইলে অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বিস্ময়কর মুন্সিয়ানায় রচনাটিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সুকৌশলে গোপন করা হয়েছে। এ রচনা পড়ে একদমই বোঝার উপায় নেই যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল ‘শতাব্দীর ঘৃণ্যতর ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার’ বিরুদ্ধে। এতে জুলাইয়ের খণ্ডিত চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষত ফ্যাসিবাদী সরকারের নৃশংসতা, মানুষের বিস্ময়কর বিস্ফোরণ ও অনন্য বৈপ্লবিক মুহূর্তের ঝাঁজ রচনাটিতে পুরোমাত্রায় অনুপস্থিত। এর সাহিত্যমানও যথেষ্ট লঘু। এজন্য তা সংশোধনের প্রস্তাব করেছি।’
এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘এনসিসির সভায় যেসব আপত্তি ও সংশোধনের প্রস্তাব উঠেছে, আমরা সেগুলো আমলে নিয়ে কাজ করছি। এগুলো সংশোধন করা হবে।’
শিক্ষার্থীরা কী শিখবে
প্রতিটি অধ্যায়ের পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে কী শিখবে, কীভাবে বিবেচনা করবে- তার দিক-নির্দেশনাও রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ শেষে। আবার সপ্তমের পাঠ শেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শতাধিক শিশুর হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন সরকারের কোন দিকটি উন্মোচিত হয়েছে, তা নিয়ে বর্ণনামূলক প্রশ্ন এবং পোস্টার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শেখানো হবে।
অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যে আরও গভীর পাঠ সামনে আনা হয়েছে। পাঠ শেষে শিক্ষার্থীদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে নতুন বাংলাদেশে শিক্ষার্থী হিসেবে প্রত্যেকের প্রত্যাশাগুলোর তালিকা লিখতে বলা হয়েছে। নবম-দশমের বইয়ে তিনটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রথমত চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের তালিকা লিখতে বলা হয়েছে। এছাড়া একটি ছকে গণতান্ত্রিক শাসনের সুবিধা ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অসুবিধা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে, যার শিরোনাম হতে পারে ‘স্বৈরতান্ত্রিক শাসন উন্নয়নের অন্তরায়’ বা ‘দুর্নীতির প্রধান কারণ অগণতান্ত্রিক শাসন।’
পাঠ্যগুলো লেখার কাজ করা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দুজন গবেষণা কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, এ পাঠ্যগুলোতে আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে যে অগণতান্ত্রিক, দমন-পীড়ন ও দুর্নীতি হয়েছে, তার পরিণতি কী হয়েছে, সেটা বাস্তবতার নিরীখে খোলামেলাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের লক্ষ্য, শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন করে গড়ে তোলা। পরম সহিষ্ণুতা, দুর্নীতিমুক্ত থেকে জীবনযাপনে তাগিদ দেওয়া।
মাধ্যমিকের কারিকুলাম ও পাঠ্য নিয়ে কাজ করে এনসিটিবির মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম শাখা। এ শাখার সদস্য অধ্যাপক ড. রবিউল কবির চৌধুরী। তিনি বর্তমানে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে রয়েছেন। অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সম্পাদনা পরিষদ রয়েছে। প্রধান সম্পাদকের নেতৃত্বে তারা কাজ করছেন। আমার জায়গা থেকে আমি মতামত দিয়েছি। এনসিসির বৈঠকেও যার যার জায়গা থেকে মতামত দিয়েছেন। সর্বসম্মতভাবে কিছু পাঠ্য যুক্ত হচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ পাঠ্যগুলো কারও একক লেখা নয়, একচোখে দেখারও সুযোগ নেই। নির্মোহভাবে বর্ণনা থাকতে হবে, বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে পাঠ্যগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের শেখানোর প্রক্রিয়াটা খুব সাবধানতার সঙ্গে ঠিক করতে হবে। লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও শিক্ষার্থীদের মানসপটে কী বার্তা দেওয়া প্রয়োজন, সেটা শ্রেণিশিক্ষকদের ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। এগুলো করা গেলে শিক্ষার্থীরা এ পাঠ্য থেকে যথাযথ মর্মার্থ শিখতে পারবে।’
এএএইচ/এএসএ/এমএফএ/এমএস