রাজধানীর সার্ক ফোয়ারা মোড়ু সংলগ্ন ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক’ ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজ থেকে বিরত থাকতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
হাইকোর্টের আদেশের পরে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করেন। বিষয়টি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানি হবে। আবেদনের বিষয় নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার খান জিয়াউর রহমান জানান, আমরা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেছি। আগামী সপ্তাহে আবেদনের ওপরে শুনানি হবে।
এর আগে রাজধানীর সার্ক ফোয়ারা মোড়ুসংলগ্ন ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক’ ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পান্থকুঞ্জ পার্ক এবং হাতিরঝিলে বিনোদন ও অন্য উদ্দেশ্যে জনসাধারণের প্রবেশাধিকারে হস্তক্ষেপ না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের এফডিসি (চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণে ওই পার্ক ও জলাধারের উন্মুক্তস্থানে নির্মাণের বৈধতা নিয়ে ওই রিটটি করা হয়।
আদেশের ফলে হাতিরঝিলের যে অংশে কাজ চলছিল বা চেষ্টা করছিল, সেই অংশে এবং পান্থকুঞ্জে কোনো ধরনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্যক্রম চলবে না জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। অবশ্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
তারই ধারাবাহকিতায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তা স্থগিতের আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অংশ হিসেবে পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধারের উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণকাজের বৈধতা নিয়ে পরিবেশ সচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের’ সমন্বয়ক আমিরুল রাজিবসহ ৯ বিশিষ্ট নাগরিক মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রিটটি করেন। অপর আবেদনকারীরা হলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, অধ্যাপক আদিল মোহাম্মাদ খান, আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম, লেখক ও গবেষক ফিরোজ আহমেদ ও গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান।
আদালতে ওইদিন রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান।
আদেশের পর আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য পান্থকুঞ্জে গাছ কাটা হচ্ছে দেখে গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে গাছ রক্ষা আন্দোলন সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এভাবে ১৬৮ দিন তারা প্রতিবাদ জানিয়ে যায়। এরপর নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। কর্মসূচি চলাকালে গাছ রক্ষা আন্দোলন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে পরিবেশ ছাড়পত্র কিংবা নির্মাণসংক্রান্ত অনুমোদন আছে কি না, সে বিষয়ে তথ্য অধিকার আইনে জানতে চায়।
এ সংক্রান্ত কোনো আবেদন আসেনি বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানায়। সম্প্রতি দেখা যায়, নতুন যন্ত্রপাতি আনতে শুরু করেছে, কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে নয় বিশিষ্ট ব্যক্তি রিটটি করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়েছেন এবং পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যে অংশটুকুর কাজ চলছে, সেই কাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।’
রিটের বিষয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ে পান্থকুঞ্জকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি হাতিরঝিলে বিজিএমই ভবন ভাঙা নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, জলাধার ধ্বংস করে কোনো ধরনের নির্মাণ ও কিছুই করা যাবে না। হাতিরঝিলের মগবাজার থেকে এফডিসি ইন্টারসেকশন পর্যন্ত একটি অংশ ভরাট করে অসৎ উদ্দেশ্যে সেখানেও নির্মাণের একধরনের চেষ্টা ও প্রস্তুতি দেখা যায়। পান্থকুঞ্জ এবং হাতিরঝিলে অসংখ্য দেশীয় পাখি ও প্রাণীর বাস। পান্থকুঞ্জের ৪০ প্রজাতির দুই হাজার গাছ কাটা হয়েছে, যা পরিবেশ, জলাধার কিংবা প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার পরিপন্থী। ২০০০ সালের প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী উন্মুক্ত স্থান ও জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণিও পরিবর্তন করা যায় না।
সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে এফডিসি (চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণে পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল এলাকার ভেতরে নির্মাণকাজ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সম্প্রসারণকাজ অন্য কোনো উপযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে এবং মগবাজার থেকে এফডিসি পর্যন্ত হাতিরঝিল জলাধার পুনরুদ্ধারের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুসচিব, সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এফএইচ/এমকেআর