পান্থকুঞ্জ-হাতিরঝিল ধ্বংস করে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ বাতিলের দাবি

3 hours ago 3

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধার ধ্বংস করে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক শায়ের গফুর, অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, প্রাণ-প্রকৃতিবিষয়ক লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব ও নাঈম উল হাসানসহ অনেকে।

কাঁঠালবাগান এলাকার বাসিন্দা ও পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুদ্দিন তুহিন জানান, এ প্রকল্পের কাজ শুরু করার পর থেকে এলাকায় জলাবদ্ধতা বেড়ে গেছে। এলাকার মানুষের একমাত্র খোলা জায়গা পান্থকুঞ্জ পার্ক বন্ধ রেখে বয়স্ক মানুষদের যেমন হাঁটার জায়গা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে, তেমনি বাচ্চাদেরও একমাত্র খেলার জায়গা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিলে নির্মাণকাজ বন্ধে হাইকোর্টের রায়ের পরও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিগত সরকারের নানাবিধ স্বেচ্ছাচারিতার কারণে গণঅভ্যুত্থান হয়। এখন জনগণের আশা ছিল রাষ্ট্রীয় আইন-আদালতসহ সব প্রতিষ্ঠান মুক্তভাবে কাজ করতে পারবে। একই সঙ্গে এ সরকার শুরুতে এসে বিগত সরকারের প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়নের কথা বললেও সেটি করা হয়নি। অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারও বিগত সরকারের পথেই হাঁটছে। বর্তমান উপদেষ্টারাও আগের সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের সুরে কথা বলা এবং গত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের পক্ষে যুক্তি দেওয়া শুরু করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার প্রায় চার দশকের বসবাস। এ এলাকায় উন্নয়নের নামে যে ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে তিনি তার প্রত্যক্ষদর্শী। মেট্রো স্টেশন থেকে শুরু করে নানাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এ সংবেদনশীল জায়গায় একের পর এক প্রকল্প তৈরি করে যেভাবে এর টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।

অধ্যাপক নাসরীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইডেন কলেজসহ পলাশী এলাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সমুন্নত রাখার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের এ অংশটি বাতিল করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শায়ের গফুর বলেন, এ প্রকল্পের সঙ্গে বিদেশি সংস্থা জড়িত থাকলেও তাদের এসব অপকর্ম করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন এ দেশেরই কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। জনপরিসরকে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা না করে জনগণের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সরকারি জায়গাকে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান অভিযোগ করেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নকশা বহির্ভূতভাবে নেওয়া এ র‍্যাম্প শুধু কোম্পানির মুনাফার জন্য যুক্ত করা হয়েছে। এমন একটি প্রকল্প যা শুধু ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের কাজে আসবে, তা এ ধরনের জনবহুল এলাকায় প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে নেওয়া একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এটি এ এলাকার বাসযোগ্যতা আরও কমিয়ে আনবে।

উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও এখনো যে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জে কাজ চলমান রয়েছে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ফিরোজ আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের ভূমিকম্প ও অগ্নি ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে আলোচনা হয় সেখানে কাঁঠালবাগান, কলাবাগান এলাকার মানুষের জন্য একমাত্র উন্মুক্ত এ স্থানটিকে ধ্বংস করে তাদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য পান্থকুঞ্জের ৪৫ প্রজাতির প্রায় দুই হাজার পূর্ণবয়স্ক গাছ ধ্বংস হয়েছে। বেঁচে থাকার কিংবা বাসস্থানের অধিকার কেবল মানুষের নয়, পশুপাখিসহ প্রতিটি প্রাণপ্রজাতির একই অধিকার রয়েছে। পান্থকুঞ্জের গাছগুলোতে বহু পাখি, পতঙ্গ ও বাদুড়ের বাসস্থান ছিল। গাছ কাটার মাধ্যমে প্রাণিকল্যাণ আইন ভঙ্গ করা হয়েছে।

গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, তাদের ১৬৮ দিনের অবস্থান কর্মসূচি ও সরকারকে বারবার চিঠি দেওয়ার পরও এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিট করা হয়। আদালত এর পরিপ্রেক্ষিতে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জে সব নির্মাণকাজ বন্ধে নির্দেশ দেন। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ বারবার আদালতের নির্দেশনা অমান্য করছে। অন্তর্বর্তী সরকার পুরো প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন এবং অবিলম্বে এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত কাজটি বাতিল করে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরেক সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান বলেন, বছরের পর বছর এ ধরনের প্রকল্প চলমান রেখে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এ প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ভঙ্গ করা এবং অর্থনৈতিক কারচুপির মাধ্যমে অলাভজনক প্রকল্পকে লাভজনক দেখানো হয়েছে।

ইএআর/একিউএফ/জেআইএম

Read Entire Article