পাবনায় দুই গ্রামের দ্বন্দ্বে বাজারে অচলাবস্থা, সমাধানে প্রশাসনকে

2 hours ago 7

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় ঈদগাহ মাঠের নামকরণ কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে মুলগ্রাম ইউনিয়নের স্থানীয় আটলংকা বাজারের অন্তত ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দোকানিরা, দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সংকট নিরসনে এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আটলংকা বাজারসংলগ্ন চিকনাই নদীর ধারে অবস্থিত ঈদগাহ মাঠের নামকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে বন্যাগাড়ি ও আটলংকা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। এ নিয়ে গত ২ অক্টোবর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যাতে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। ওই ঘটনার পর থেকে দুই গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আটলংকা বাজার এলাকায় বন্যাগাড়ি গ্রামের ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এতে স্থানীয়দের দুর্ভোগ বেড়েছে ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বড় ধরনের আর্থিক সংকটে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আটলংকা গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বাজারে যেতে দিচ্ছেন না ও দোকান খুলতে বাধা দিচ্ছেন। এমনকি, দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর সমাধান মেলেনি বলে অভিযোগ তাদের।

মামুন টেইলার্সের মালিক আল মামুন বলেন, ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে, এটা ঠিক। কিন্তু তাই বলে আমরা বাজারে ব্যবসা করতে পারব না কেন? আটলংকা গ্রামের মানুষ আমাদের দোকান খুলতে দিচ্ছে না। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছি, এখন কিস্তি শোধ করতে পারছি না। টানা ১৫ দিন দোকান বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে কঠিন সময় পার করছি।

মুদি দোকানদার হাবিবুল্লাহ বলেন, দোকান বন্ধ থাকায় মালামাল নষ্ট হচ্ছে। এই ক্ষতির দায়িত্ব কে নেবে? ব্যবসা না করতে পারলে আমাদের পথে বসতে হবে। দোকান খুলতে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে, হুমকিও দিচ্ছে। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।

ব্যবসায়ী ফজলুল হক ও রুবেল হোসেন বলেন, আমরা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছি। এ সপ্তাহে কিস্তি জমা দেওয়ার সময়, কিন্তু ব্যবসা না করতে পারায় আমরা দিশেহারা। পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, চিকিৎসার টাকাও জোগাড় করতে পারছেন না।

অন্যদিকে, আটলংকা গ্রামের কিছু বাসিন্দা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বন্যাগাড়ি গ্রামের লোকজন রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। আটলংকা গ্রামের কেউ ওই রাস্তা দিয়ে গেলে তাকে হেনস্তা করা হয়। এমনকি, নারীদেরও নানাভাবে হয়রানি করা হয়। তারা স্বীকার করেন, কিছু মানুষের উত্তেজিত আচরণে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তবে বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন উভয় গ্রামের অনেকেই।

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে। আটলংকা গ্রামের মানুষ বন্যাগাড়ি দিয়ে চলাচল করবে, আবার বন্যাগাড়ি গ্রামের মানুষও আটলংকা বাজারে গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলবে। আশা করছি, দুই-এক দিনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হবে।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এসএএইচ

Read Entire Article