মার্কিন সামরিক ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচলিত সামরিক শক্তির ব্যাপক বৃদ্ধির পাশাপাশি, দ্রুত ও ধারাবাহিকভাবে চীন তার পারমাণবিক অস্ত্রাগারের আকার এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করেছে।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধান জেনারেল অ্যান্থনি কটন গত মার্চে কংগ্রেসকে বলেছিলেন, ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান দখলের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার এই নির্দেশ স্থল, আকাশ ও সমুদ্র থেকে নিক্ষেপের মতো পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করছে।
চীনের ২০২৩ সালের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিতে তারা স্পষ্ট করে বলেছে, কোনো অবস্থাতেই তারা প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না। এই নীতিকে ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ বা প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি বলা হয়। এ নীতিতে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, চীন কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধারী নয়, অ-পারমাণবিক সশস্ত্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না বা ব্যবহারের হুমকি দেবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পারমাণবিক যুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হতে পারে না। এমন যুদ্ধ শুরু করাই উচিত নয়। তারা আরও বলেছে, চীন ‘আত্মরক্ষামূলক পারমাণবিক কৌশল’ অনুসরণ করে এবং কঠোরভাবে ‘প্রথম ব্যবহার নয়’ নীতি মেনে চলে।
পেন্টাগনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি ঘোষণা করলেও বাস্তবে চীনের কৌশলে অন্য কিছু থাকতে পারে। চীনের সামরিক সক্ষমতা-সংক্রান্ত পেন্টাগনের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, যদি প্রচলিত (অ-পারমাণবিক) কোনো হামলায় চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার বা এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে, অথবা সে হামলার প্রভাব যদি কার্যত পারমাণবিক হামলার সমান হয় বা মারাত্মক হয়ে ওঠে, তাহলে সেই পরিস্থিতিতে চীন প্রথমেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
এ ছাড়া তাইওয়ান বিষয়ে প্রচলিত সামরিক যুদ্ধে বড় ধরনের পরাজয় যদি কমিউনিস্ট সরকারের টিকে থাকাকেই মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলে, তবে সে ক্ষেত্রেও চীন প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে পারে।
এ দিকে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেইজিংকে অপবাদ দিতে ও কলঙ্কিত করতে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্ত করতে ‘চীনের পারমাণবিক হুমকি’ নিয়ে যে কোনো ধরনের অপপ্রচারের আমরা বিরোধিতা করি।
শিকাগোভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা সংস্থা বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টসের তথ্য অনুযায়ী, চীন অন্য যে কোনো পারমাণবিক সশস্ত্র শক্তির তুলনায় দ্রুত তার অস্ত্রের মজুত বাড়াচ্ছে এবং আধুনিকায়ন করছে। বর্তমানে দেশটি প্রায় ৬০০টি ওয়ারহেড জমা করেছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন প্রায় ৩৫০টি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো এবং সড়কপথে মোবাইল লঞ্চারের জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ঘাঁটি তৈরি করছে।
ধারণা অনুযায়ী, চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) হাতে বর্তমানে প্রায় ৭১২টি স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণযন্ত্র রয়েছে। তবে এর সব কটিই পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে, এমন নয়। এর মধ্যে প্রায় ৪৬২টি উৎক্ষেপণযন্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম, যা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে পারে।
আরও পড়ুন: কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার ও বিমানঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১৮
বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টসের মতে, পিএলএর অনেক উৎক্ষেপণযন্ত্র স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। আঞ্চলিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতেই এসব তৈরি করা হয়েছে। তবে এসব উৎক্ষেপণযন্ত্রের বেশিরভাগ পারমাণবিক হামলার উপযোগী করে তৈরি করা হয়নি।
পেন্টাগনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিএলএর ব্যবহার উপযোগী পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তারা এমন একটি বড় ও বৈচিত্র্যময় ভান্ডার গড়ে তুলতে চাইছে, যাতে তুলনামূলক কম নির্ভুলভাবে হামলা চালাতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টন (মাল্টি-মেগাটন) বিস্ফোরণ ক্ষমতার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) থাকবে।