মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারমাণবিক হুমকি ও রাশিয়ার সীমানার কাছে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণার পর নতুন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। তবে শুরুতে কিছুটা নীরব থাকলেও এবার মস্কো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে। তারা বলছে, এই ইস্যুতে প্রকাশ্যে কোনো বিতর্কে জড়াতে চায় না ও এ বিষয়ে সব পক্ষকে ‘অত্যন্ত সতর্ক’ আচরণের আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক আলোচনা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন মোতায়েন নতুন কোনো ঘটনা নয়, এগুলো আগে থেকেই নির্ধারিত ও প্রস্তুত অবস্থায় থাকে।
গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, তিনি দুটি মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন রাশিয়ার আরও কাছে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘোষণার পরপরই রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে ট্রাম্পের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ করতে রাশিয়াকে মাত্র দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন ট্রাম্প। এই ‘আলটিমেটাম’র প্রতিক্রিয়ায় মেদভেদেভ বলেন, এটি সরাসরি যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নামান্তর। ট্রাম্প পাল্টা জবাবে মেদভেদেভকে ‘ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট’ বলে কটাক্ষ করেন, যিনি এখনো নিজেকে ক্ষমতায় ভাবেন।
এই বাকযুদ্ধের মধ্যেই মেদভেদেভ সোভিয়েত আমলের ‘ডেড হ্যান্ড’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এই স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক প্রতিশোধ ব্যবস্থা প্রয়োজনে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই হামলা চালাতে সক্ষম। ফলে দুই পক্ষের কথার লড়াই এবার বাস্তব পারমাণবিক হুমকির দিকে এগোচ্ছে কি না- তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে।
তবে ক্রেমলিন এখনো পরিস্কারভাবে সংঘাতে জড়ানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে। পেসকভ বলেন, আমরা এটিকে উত্তেজনা বৃদ্ধির সংকেত হিসেবে দেখছি না। কিন্তু এটি নিঃসন্দেহে একটি জটিল ও আবেগপ্রবণ ইস্যু। তাই আমরা প্রত্যাশা করি, সবাই এই বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।
ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়া ও তাদের জ্বালানির প্রধান গ্রাহক- ভারত, চীনসহ কয়েকটি দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক বক্তব্যে বলেন, শান্তি আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হলেও রণাঙ্গনে রাশিয়ার অবস্থান এখন আরও দৃঢ়।
এদিকে, শান্তি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে রাশিয়ায় পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে পুতিনের সঙ্গে উইটকফের বৈঠক হলেও তাতে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ক্রেমলিন মুখপাত্র পেসকভ উইটকফের সফরকে ‘গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করে বলেন, আমরা তাকে মস্কোতে স্বাগত জানাই ও তার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যেতে আগ্রহী।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ