পারমানেন্ট জবের জন্য বিসিএস দিলাম: এনামুল

9 hours ago 5

ডা. এনামুল হক রচি ৪৪তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। সম্প্রতি তার স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—
ডা. এনামুল হক রচি: আমার জন্ম ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের দেউলডাংরা গ্রামে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি দেউলডাংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিলের কাছে আমাদের বাড়ি হওয়ায় স্কুল থেকে এসেই বেশিরভাগ সময় কেটেছে বিলের পানিতে সাঁতার কেটে। কখনো কলা গাছের ভেলা বানিয়ে পানিতে খেলা করে ও বড়শিতে মাছ শিকার করে। ছেলেবেলায় মাছ শিকার করার প্রবল শখ ছিল। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলাম নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এসএসসি পাস করি। হাইস্কুল জীবনটাও আমার ভালোই রঙিন ছিল। খুব কাছের কিছু বন্ধু ছিল। তাদের সাথে অনেক মধুর স্মৃতি আছে।

জাগো নিউজ: বিসিএস পরীক্ষা দেবেন—এমন ভাবনা মাথায় এলো কীভাবে?
ডা. এনামুল হক রচি: আমার ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার পর অনেক বন্ধু-বান্ধব ৪২তম স্পেশ্যাল বিসিএসে ক্যাডার হয়। তখনো আমার বিসিএস সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। ইন্টার্নি শেষ হওয়ার পর দেখলাম, প্রাইভেট হসপিটাল নির্ভর যেসব চাকরি আছে, সেগুলোতে জব করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে অনেক কাজের প্রেশার। আমি একটু অলস প্রকৃতির—আরাম প্রিয় মানুষ। সেজন্য চেম্বার প্র্যাকটিস করতেও মন চাচ্ছিল না। তাই ভাবলাম বিসিএস দেবো, একটা পারমানেন্ট জব দরকার।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, পাশাপাশি প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
ডা. এনামুল হক রচি: যখন বিসিএসের চিন্তা মাথায় এলো; তখন ভাবলাম সিলেট ছেড়ে চলে যাবো। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেলের এক বন্ধুর (ফেরদৌস হাসান তোহিদ) কাছে চলে এলাম ময়মনসিংহে। সে ৪২তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে তখন। তার বইগুলো নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। কোচিংয়ে ভর্তি না হয়ে লাইভ এমসিকিউ অ্যাপস ডাউনলোড করলাম। সেখানে নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়া শুরু করলাম। নিজের মতো করে পড়তাম আর সব পরীক্ষা দিতাম। প্রথমদিকে মার্ক কম উঠতো, পরে আস্তে আস্তে দেখলাম ভালো মার্ক উঠছে। রিটেনের জন্য কোচিং সেন্টারে অনলাইনে পরীক্ষা দিতাম। এরপর সামনে ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি, যা ২০২২ সালের ২৭ মে অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলিতে টিকলাম এবং লিখিতের জন্য পড়াশোনা শুরু করলাম। তারপর ২৯ ডিসেম্বর থেকে লিখিত শুরু হলো। লিখিত পাস করার পর ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভাইভা দিলাম। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে মেধাক্রম ৮৯তমে উত্তীর্ণ হলাম।

জাগো নিউজ: ৪৪তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার অনুভূতি কেমন?
ডা. এনামুল হক রচি: ৪৪তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত! এই সাফল্যের জন্য আমার পরিবার, শিক্ষক, বন্ধু ও সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার নিকট অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
ডা. এনামুল হক রচি: বিসিএস জার্নিতে আমার কিছু বন্ধুর নাম না বললেই নয়। এরমধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেলের তোহিদ অন্যতম। আমরা মেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্টেও একসাথে পড়াশোনা করেছি। সে থাকাতে আমার মেডিকেলে চান্স পাওয়া ও বিসিএসে পাস করা দুটাই অনেক সহজ হয়েছে। আরেক বন্ধু তানভীর; সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছে। সে অ্যাকাডেমি ও মানসিকভাবে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে।

জাগো নিউজ: বিসিএস জার্নিতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?
ডা. এনামুল হক রচি: বিসিএস জার্নিতে প্রতিবন্ধকতা আসলে তেমন ছিল না। আমি পরিবারের অনেক আদরের সন্তান। আমার বাবা ও বড় ভাই অনেক সাপোর্টিভ। তাদের কাছে আমি কিছু চেয়েছি কিন্তু পাইনি এমন কখনো হয়নি। তাদের সব জল্পনা-কল্পনা আমাকে ঘিরেই। এদিক থেকে আসলে আমি অনেক ভাগ্যবান।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
ডা. এনামুল হক রচি: বিসিএসটা আসলে টেকনিক্যালি পড়লে অনেক সহজ ও কম সময়ে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করেও একসাথে পড়লে অনেক কঠিন জিনিস ও সহজে আয়ত্তে চলে আসে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ডা. এনামুল হক রচি: ভবিষ্যতে একজন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের উপকার করতে চাই। বড় কোলাহলপূর্ণ শহরে আমার একটু কম ভালো লাগে। তাই উপজেলা শহরে থাকার ও জীবনযাপন করার ইচ্ছে। বাকিটা আল্লাহ ভালো জানেন। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। সবার জন্য শুভ কামনা।

এসইউ/এএসএম

Read Entire Article