পাশের একটি দেশ ফ্যাসিবাদের সেফ হোমে পরিণত হয়েছে : রিজভী

2 hours ago 3
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পাশের একটি দেশ ফ্যাসিবাদের সেফ হোমে পরিণত হয়েছে। দিল্লি যেন ফ্যাসিবাদের একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তারা (ফ্যাসিবাদীরা) বসে নেই। তারা নানাভাবে, নানা কায়দায় তাদের চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এই ষড়যন্ত্রকে আমাদের সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে।  সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নিম গাছের চারা রোপণ কর্মসূচি’ আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ (কৃষিবিদ)। এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ মন্তব্য করেন।  জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে রিজভীকে স্বাগত জানান ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোর্শেদ হাসান খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটি-২০২৫ এর আহ্বায়ক ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. সোহাগ আওয়াল, সদস্য প্রকৌশলী মাহবুব আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ড. লুৎফর রহমান খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও ঢাবি সাদা দলের অন্য নেতারা। রুহুল কবির রিজভী বলেন, ইতোপূর্বে যারা দেশের টাকা পাচার করেছে, অর্থনীতিকে একটি হুন্ডির চক্রের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছিল তাদের জন্য ফের উত্থান না ঘটে। গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে একে অপরের প্রতি আলোচনা-সমালোচনার বিষয়টি থাকলেও, আমাদের মধ্যে একটা ন্যূনতম ঐক্য থাকতে হবে। এই ঐক্য যদি না থাকে তাহলে সেই ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঘটা অস্বাভাবিক হবে না। আপনারা জানেন, পাশের একটি দেশ ফ্যাসিবাদের সেইফ হোমে পরিণত হয়েছে। দিল্লি যেন ফ্যাসিবাদের একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তারা (ফ্যাদিবাদীরা) বসে নেই। তারা নানাভাবে নানা কায়দায় তারা তাদের চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এই ষড়যন্ত্রকে আমাদের সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। গণতান্ত্রিক শক্তির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই জিনিসগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে।  তিনি বলেন, আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে এই যে কথা বলছি, সেটা কত আনন্দ-উচ্ছ্বাস বা উল্লাসের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন আমি ছাত্র রাজনীতির কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি, তখন অপরাজেয় বাংলা, মধুর ক্যান্টিনে এবং সারা ক্যাম্পাসে কত রাজনৈতিক বক্তৃতা, বিতর্ক আমরা করেছি। সেই আনন্দের দিন যেন স্বৈরাচারের সময়ে হারিয়ে গিয়েছিল। এই অবস্থায় আমরা কখনো কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যেতে সাহস করতাম না। যখন যেতাম তখন আমরা গাড়ির জানালাটা তুলে দিতাম, কেউ যেন না দেখে। শেখ হাসিনার আমলে ফ্যাসিবাদের প্রাণকেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পরিবেশকে বিপন্ন করে ফেলেছিল শেখ হাসিনা।  তিনি আরও বলেন, একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জারি থাকলেও ভেনিজুয়েলা থেকে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি করপোরেট স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেছে এবং ছাত্র আন্দোলন সেখানে তীব্র হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তার সময়ে সেই চিহ্নটুকুও রাখেনি। তখন বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রের জন্য এবং গণতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা মুশকিল ছিল। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান থাকবে, একটি ছাত্র সংগঠন আরেকটি সংগঠনের সমালোচনা করবে, দেশ ও রাষ্ট্র নিয়ে কথা বলবে সেই সুযোগই রাখেনি বিগত দেড় দশকে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থানের পরিবেশকে বজায় রাখতে হবে।  পরিবেশ রক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে মানবজাতি বৈশ্বিকভাবে একটি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। মানবজাতি তার অস্তিত্ব বিনাশের পথে এগিয়ে চলেছে। বৈশ্বিক উষ্ণয়নের কারণে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিজ্ঞানীরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। আমরা জানি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড তৈরি করেছে, এখান থেকে বিভিন্ন দরিদ্র বা অনুন্নত দেশগুলোকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ কাজটি আরও গুরুত্বসহকারে করা উচিত, তাহলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। এটি শুধু একটি রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্ব নয়। এটি একটি সামাজিক আন্দোলন, ব্যাপকভাবে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এটি সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার সময়ে উন্নয়নের নামে দেশকে বসবাসের অযোগ্য করার পাঁয়তারা সম্পর্কে রিজভী বলেন, যারা তথাকথিত উন্নয়নের নামে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট দেখিয়ে বৃক্ষ নিধন ও নদী বন্ধ করে দিয়ে ভূমিদস্যুর খেতাব পেয়েছেন তারা এই পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী করে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছেন। তাদের প্রতিনিধি ছিলেন ৫ আগস্টের পরে দেশ ছেড়ে পালানো ব্যক্তিরা। তথাকথিত মেগা প্রজেক্টের নামে তারা নদী ভরাট করেছে, খাল ভরাট করেছে, তারা বৃক্ষ উধাও করে দিয়েছে। কারণ, স্বৈরাচার যখন আসে তখন স্বৈরাচারের দ্বারা কখনোই মানুষের মঙ্গলের জন্য কোনো ভালো কাজ হতে পারে সেটা কেউ বিশ্বাস করতে পারে না।  জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বৃক্ষের নিচে বৃক্ষরোপণ করার জন্য জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেই উদ্যোগটি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এই ফাউন্ডেশন যে কর্মসূচি হাতে নেয় সেগুলো প্রচলিত কর্মসূচির বাইরে এবং তাৎপর্যপূর্ণ। তারা তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে ভিন্ন মাত্রা তৈরি করে। যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন কাজ শুরু করেছে সেই লক্ষ্যের অধিকাংশই তারা সম্পন্ন করতে পেরেছে। করোনার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ, দুর্যোগ, বন্যা, শীত-গরম জাতীয় সব ক্রান্তিলগ্নে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন কাজ করেছে। উল্লেখ্য, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রুহুল কবির রিজভী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে কয়েকটি নিম গাছের চারা লাগিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
Read Entire Article