পুনর্বাসনে অপরিহার্য হলেও গুরুত্বহীন ফিজিওথেরাপি

2 days ago 6

দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ধারাবাহিক উন্নয়ন ঘটলেও এখনো উপেক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ শাখা ফিজিওথেরাপি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকটকালীন বা অতিজরুরি স্বাস্থ্যসেবায় ফিজিওথেরাপি গুরুত্ব না পাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন, ব্যথা নিয়ন্ত্রণ এবং রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্ম বাংলাদেশ আয়োজিত এক অংশীজন সভায় বক্তারা ফিজিওথেরাপিস্টদের সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তির তাগিদ দেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. তসলিম উদ্দিন বলেন, জাতিসংঘের হিসেবে দেশে প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেঁচে আছেন। তাদের পুনর্বাসন সমন্বিত টিমওয়ার্ক ছাড়া সম্ভব নয়। অথচ অতিজরুরি স্বাস্থ্যসেবায়ও ফিজিওথেরাপি উপেক্ষিত। ফিজিওথেরাপিস্টদের প্রথমে স্বীকৃত স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, না হলে আইনগতভাবে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন না।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে ফিজিওথেরাপির কার্যকারিতা। যদি দেশে শক্তিশালী ইনস্টিটিউট ও প্রশিক্ষণব্যবস্থা গড়ে উঠতো, রোগীদের বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া লাগত না।

বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিবছর ৮০০–৯০০ ফিজিওথেরাপিস্ট বের হলেও দেশে এখনো মাত্র ছয় হাজারের বেশি ফিজিওথেরাপিস্ট আছেন। উপজেলা পর্যায়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া গেলে এই সেবা সারাদেশে পৌঁছে যাবে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা মাথায় রেখে ফিজিওথেরাপিকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা টিমওয়ার্ক ছাড়া সম্ভব নয়। জুলাই বিপ্লবে আহতদের পুনর্বাসনেও ফিজিওথেরাপির অপরিহার্য ভূমিকা ছিল। বিএমডিসি ও বাংলাদেশ রিহ্যাব কাউন্সিলের মধ্যে সমন্বয় হলে এবং সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে এ খাতে বড় অগ্রগতি হবে।

আন্তর্জাতিক তুলনায় বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির ঘাটতি আরও প্রকট। উন্নত দেশে যেখানে প্রতি লাখ মানুষের জন্য ৫০–৬০ জন ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছেন, বাংলাদেশে সেই সংখ্যা মাত্র ৩–৪ জন।

বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম শাহাদাত হোসেন বলেন, এখানে একটা গ্যাপ আছে, এটা মিনিমাইজ করতে হবে। ডাক্তার এসেস করে, আমরা এসেসমেন্ট করতে পারি না। অথচ আমাদের এসেসমেন্ট করার যোগ্যতা আছে৷

তিনি বলেন, আজ সিআরপিসির কেনো জন্ম হলো? প্রতিদিন সেখানে ১ হাজার নতুন করে রোগী যায়। যদি ডাক্তাররাই যথেষ্ট হতেন, তাহলেতো ঢাকা মেডিকেল সিআরপি হয়ে যেতো।

অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব এম এ হাকিম মজুমদার বলেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যে একটা চরম অব্যবস্থাপনা চলছে। এখানে কোনো রেফারেল সিস্টেম নেই। কেউ রেফার করলেও বিরক্ত হয়। কেন সরাসরি আসলো না? কিছুদিন আগে আমি সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে গেলাম, অর্থোপেডিক বিভাগ থেকে ফিজিক্যাল মেডিসিনে পাঠালো, ওখান থেকে ফিজিওথেরাপি সেন্টারে পাঠালো। ওখানে ব্যাপক চাপ। বলল, আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি, বাড়িতে এভাবে করবেন। এখানে আসার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, কমিউনিটি পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। ৪০/৫০ বছরের ওপরে বেশির ভাগ মানুষ ব্যথায় ভোগেন। তাদের ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন।

বক্তারা বলেন, ফিজিওথেরাপি কেবল সহায়ক নয়, বরং একটি অপরিহার্য শাখা। জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে স্বীকৃতি, সরকারি নিয়োগ, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দ্রুত নিশ্চিত করা জরুরি।

এসইউজে/এমআইএইচএস/জিকেএস

Read Entire Article