পুরান ঢাকায় ভূমিকম্প: ঘর ছাড়লে নিরাপত্তা, নাকি নতুন ঝুঁকি?

ভূমিকম্প হলে সতর্কতায় নিরাপদ ও ফাঁকা স্থানে অবস্থান নিতে বলা হয়। কিন্তু পুরান ঢাকার বাস্তবতা কি এমন? এখানে একটি বাড়ির সঙ্গে আরেকটি বাড়ি লাগোয়া। সরু গলি, তার মধ্যে দিয়ে রিকশা বেরোলে পথচারীর হাঁটারও জায়গা নেই। ভিড় এমন যে, এক মুহূর্ত অসতর্ক হলেই পাশে হাঁটা মানুষের গায়ে লেগে যায়। এমন শহুরে ঘিঞ্জি পরিবেশে ভূমিকম্পের সময় মানুষ যাবে কোথায়- প্রশ্নটা তাই নতুন করে সামনে এসেছে। বংশালের কসাইটুলি এলাকায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সেই প্রশ্ন আরও তীব্র করেছে। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনির পর সাততলা ভবনের ছাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী (রেলিং) ভেঙে নিচে পড়ে নিহত হন তিন পথচারী। গুরুতর আহত হন অনেকে। ‘ধরুন ভূমিকম্পের কম্পনে ভয় পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সড়কে দাঁড়ালেন নিরাপত্তার আশায়। কিন্তু মাথার ওপর থেকে পড়ে গেলো কোনো ভবনের ইট, ফুলের টব বা ভাঙা কংক্রিটের টুকরো। তবে কি ঘরের ভেতরে থাকা নিরাপদ, নাকি বাইরে?’ এ প্রশ্ন ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আফিয়া ইসলামের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন ছাদে দেখি নিরাপত্তা দেওয়ালের ওপর সারি সারি করে অনিরাপদভাবে রাখা ইট, টব, লোহার জিনিস। এগুলো আসলে পথচারীর ওপর পড়ার

পুরান ঢাকায় ভূমিকম্প: ঘর ছাড়লে নিরাপত্তা, নাকি নতুন ঝুঁকি?

ভূমিকম্প হলে সতর্কতায় নিরাপদ ও ফাঁকা স্থানে অবস্থান নিতে বলা হয়। কিন্তু পুরান ঢাকার বাস্তবতা কি এমন?

এখানে একটি বাড়ির সঙ্গে আরেকটি বাড়ি লাগোয়া। সরু গলি, তার মধ্যে দিয়ে রিকশা বেরোলে পথচারীর হাঁটারও জায়গা নেই। ভিড় এমন যে, এক মুহূর্ত অসতর্ক হলেই পাশে হাঁটা মানুষের গায়ে লেগে যায়। এমন শহুরে ঘিঞ্জি পরিবেশে ভূমিকম্পের সময় মানুষ যাবে কোথায়- প্রশ্নটা তাই নতুন করে সামনে এসেছে।

বংশালের কসাইটুলি এলাকায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সেই প্রশ্ন আরও তীব্র করেছে। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনির পর সাততলা ভবনের ছাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী (রেলিং) ভেঙে নিচে পড়ে নিহত হন তিন পথচারী। গুরুতর আহত হন অনেকে।

jagonews24.com

‘ধরুন ভূমিকম্পের কম্পনে ভয় পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সড়কে দাঁড়ালেন নিরাপত্তার আশায়। কিন্তু মাথার ওপর থেকে পড়ে গেলো কোনো ভবনের ইট, ফুলের টব বা ভাঙা কংক্রিটের টুকরো। তবে কি ঘরের ভেতরে থাকা নিরাপদ, নাকি বাইরে?’

এ প্রশ্ন ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আফিয়া ইসলামের।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন ছাদে দেখি নিরাপত্তা দেওয়ালের ওপর সারি সারি করে অনিরাপদভাবে রাখা ইট, টব, লোহার জিনিস। এগুলো আসলে পথচারীর ওপর পড়ার জন্যই রাখা নাকি কে জানে। একটু বাতাস হলেই ভয় লাগে, কিছু পড়ে যাবে কি না। এবারের ভূমিকম্প দেখেন, দুর্বল দেওয়াল ভেঙে পথচারী মারা যাওয়ার ঘটনাই জানান দেয় বিষয়টা কতটা ভয়াবহ।

আরও পড়ুন

ভূমিকম্পে ভবনের রেলিং ধসে সলিমুল্লাহ মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু
ভূমিকম্প: ঢাকা জেলা প্রশাসনের জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু

একই অভিজ্ঞতা পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলামের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ভূমিকম্প হলে ঘরে বসে দোয়া করা ছাড়া আসলে কিছুই করার নেই। ফাঁকা জায়গা এখানে নেই। যেখানে জায়গা আছে, সেখানে যেতে যেতে লাগে ১০-১৫ মিনিট। নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণ না করলে কেউই নিরাপদ থাকবে না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, পুরান ঢাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজন পুরোনো ভবনের কাঠামোগত জরিপ ও সংস্কার। ছাদের নিরাপত্তা দেওয়ালে ঢিলেঢালা বসানো ইট/টব অপসারণ, ভবনের মালিকদের জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি দরকার জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত খালি হওয়ার ‘সেফ রুট’ নির্ধারণ এবং স্থানীয়ভাবে ওপেন স্পেস তৈরি ও সংরক্ষণ।

jagonews24.com

পুরান ঢাকার বাসিন্দা সাহিদ হোসেন। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস মনিটারিং অর্গানাইজেশনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা এই ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, পুরান ঢাকার ৬০ শতাংশের বেশি বাড়িই ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের পরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ ও সামগ্রিক উন্নয়ন ছাড়া উপায় নেই। এজন্য প্রয়োজনে কঠোর আইন করে হলেও, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান জাগো নিউজকে বলেন, পুরান ঢাকার পুরোনো ঘরবাড়িগুলোতে মানুষের নিরাপত্তা সবার দায়িত্ব। ভবনের মালিক, ভাড়াটিয়া এবং অন্য ব্যবহারকারীদের অবশ্যই ভবনগুলো এমনভাবে নিরাপদ রাখতে হবে যেন অন্যদের ক্ষতি না হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে রাজউক, সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব এই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করা এবং নিয়মিত মনিটরিং করা। স্থানীয় পর্যায়ে পঞ্চায়েত কমিটিও ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, শুধু ছাদ থেকে কিছু পড়ে ক্ষতি নয়, ভবনের ভেতরেও আগুন বা গ্যাস বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকতে পারে। সবাই মিলে দায়িত্ব নিয়ে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

এমডিএএ/এএমএ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow