পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থা-ইমিগ্রেশনে যারা আছেন তারা কী অন্ধ

সাবেক আইজিপি বেনজীরের দেশ ত্যাগের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইমিগ্রেশনে যারা আছেন তারা অন্ধ নাকি বোবা, নাকি পড়াশোনা যানেন না। সব পত্রপত্রিকায় তো বেনজীরের খবর প্রকাশ হয়েছে।

তিনি বলেন, বেনজীরের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। দুদক তাকে কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে।

সোমবার (৩ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেনের মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপির মূল লক্ষ্য এই সরকারকে সরানো উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, আওয়ামী লীগ একবার ভারতে পালিয়েছিল, আবারও পালাবে, দেশের মানুষ কিছু না বললেও পালাবে। কথায় আছে ‘বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায়’।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন সরকার ভর্তুকির নামে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজি। এসবের প্রভাবও পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের ওপর। মানুষের কী কষ্ট! আর এই সরকার অর্থের অপচয় করে একেক সময় একেকটা ঘটনা ঘটায়।

আরও পড়ুন

• স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে সিঙ্গাপুর গেছেন বেনজীর আহমেদ

তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৬ বছর ধরে কষ্ট করছেন, হয়তো আপনাদের আর কিছুদিন কষ্ট করতে হবে। এই আন্দোলন সফল হওয়া মানে গণতন্ত্র ফেরত পাওয়া, বাংলাদেশকে ফিরে পাওয়া। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণের ভোটে এখন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় না। এখন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে পুলিশ ও কিছু এজেন্সি। এটা কি তাদের কাজ? এদের কাজ কি গুমে সহযোগিতা করা? দাগি আসামিকে সীমান্ত পার করে দেওয়া? অবশ্যই নয়।

গয়েশ্বর বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখেছে পুলিশ। এখন খবরের কাগজ খুললে বেনজীর ও ভারতে খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনারের খবর। এ সময় এমপি আনারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, সোনা পাচারের সঙ্গে তিনি যদি জড়িত হন, তাহলে সেই বিচারটাও জনসম্মুখে হওয়া উচিত। ভারতের কারা এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সেটাও বের করা উচিত।

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারসহ গণমাধ্যমে দুর্নীতির নানান খবর প্রকাশ হয়েছে। এই বাচ্চুর একটা পশমও ছিঁড়তে পারেনি দুদক, কেন গ্রেফতার করতে পারেনি?

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদকে ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, আপনারা জানেন ২০১৫ সালে আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব। তখন র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর আহমেদ। সালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হলো ঢাকার উত্তরা থেকে, আবিষ্কার করা হলো ভারতের শিলংয়ে।এই যে দেশ থেকে একটা মানুষকে বের করে দেওয়া।

আরও পড়ুন

• ইশরাক হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

কবি ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করা প্রসঙ্গ টেনে এই বিএনপি নেতা বলেন, কবি ফরহাদ মজহার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাকে ঢাকা থেকে তুলে নেওয়া হলো। যারা নিলেন তাদের চ্যালেঞ্জ করে পুলিশ খুলনা থেকে ফিরিয়ে আনলেন। অর্থাৎ ফরহাদ মজহারকে আরেকটি দেশে নেওয়ার চেষ্টা ছিল। মুক্তির পর ফরহাদ মজহার কথা বলেন না, বোবা হয়ে গেলেন। কেন, কারণ কী? তবে,সব কথা বলা যায় না, বোঝা তো যায়।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কথা বলতে বলতে তিনি এমন পর্যায়ে গেছেন, সুস্থ নাকি অসুস্থ বোঝা যাচ্ছে না। চালাক মানুষ মনে করেন তিনি ছাড়া অন্য কেউ কিছু বোঝেন না, ওবায়দুল কাদেরও তাই ভাবেন।

সরকারের নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা মন্তব্য করেন গয়েশ্বর বলেন, দেশের অবস্থা ভালো নেই। সরকার একটি ঘটনার পর আরেকটি ঘটনাকে সামনে আনে। আজিজ, বেনজীর, আনারের ঘটনা জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র নেওয়ার চেষ্টা। তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য। এই নিয়ে যদি আমরা ব্যস্ত থাকি, তাহলে কপালে হাত দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল শিকদারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রফিকুল আলম মজনু, নবীউল্লাহ নবী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।

কেএইচ/ইএ/এএসএম