পুলিশ নয়, সিএ কর্মকর্তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসায় সহকর্মীরা

6 hours ago 4

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট (সিএ) হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় জড়িত মূলহোতাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ।

অফিসের বিষয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই সিএ কর্মকর্তাকে ইয়াবা দিয়ে তার সহকর্মীরা ফাঁসায় বলে জানায় পুলিশ।

শনিবার (২২ফেব্রুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, ফারুক মিয়া সুমন ও আরিফ ইমরান খান।

তালেবুর রহমান বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অফিস থেকে হাসান আলী তার দুই সহকর্মী বাশার ও ইমাম হোসেনসহ বের হন। তারা তিনজন এসকেএস স্কাই ভবনের ফুটপাত ধরে হেঁটে পুলিশ প্লাজার দিকে যাচ্ছিলেন। হাসান অফিস থেকে বের হওয়ার পর পিছু নেয় অচেনা দুই ব্যক্তি। হাসান আলী হেঁটে এসকেএস স্কাই ভবনের সামনে পৌঁছালে আচমকা চারদিক থেকে ৮ থেকে ১০ জন লোক তাকে ঘিরে ধরে এবং মারধর শুরু করে। এসময় কৌশলে হাসানের পকেটে ১৯৩ পিস ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সময় সেখানে অবস্থানকারীরা থানায় ফোন দিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে হাসানকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ইয়াবাসহ হাসান আলীকে আটক করায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দেয় এবং আদালতে পাঠায়। পরবর্তী সময় আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, পুলিশ হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়েছে এমন একটি অভিযোগ উঠলে বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে খবর ছাপা হয়। হাসান আলীর ঘটনায় তেজগাঁও বিভাগের বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশকে জড়িয়ে গণমাধ্যমে আসা বিষয়টি নজরে আসে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এনডিসির। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে মাঠে নামে পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, নিরলস প্রচেষ্টায় ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে সক্ষম হয় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশের একটি দল। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁওয়ের পূর্ব নাখালপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফারুক মিয়া সুমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ঘটনার প্রকৃত কারণ। পরবর্তী সময় সুমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর মূলহোতা আরিফ ইমরান খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তালেবুর রহমান বলেন, হাসান আলীর সহকর্মী আরিফ ইমরানের সাবেক গাড়ি চালক ফারুক মিয়া সুমন। হাসানের সঙ্গে অফিসিয়াল বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল আরিফ ইমরানের। হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে পারলে সুমনকে পুরস্কৃত করা হবে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াবা সংগ্রহ করে। সেই ব্যক্তিই মূলত আরও ৭ থেকে ৮ জনকে ভাড়া করে। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সুমন আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃত ফারুক মিয়া সুমন ও আরিফ ইমরান দুই জনই কারাগারে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। এর সঙ্গে পুলিশের কেউ জড়িত নয়। মূল আসামিদের ধরা হয়েছে, একজন নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ঘটনার ভুক্তভোগী সিএ কর্মকর্তা হাসান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার অফিসের এক সহকর্মীর পরিকল্পনায় আমাকে ফাঁসানো হয়। বিনা কারণে সাত দিন কারাভোগের পর ৯ ফেব্রুয়ারি আমি জামিনে মুক্ত হই।’

কেআর/এসএনআর/এমএস

Read Entire Article