পুলিশ ভিন্ন থানা থেকে এসে অনুমতি ছাড়া গুলি করেনি, দাবি আসামিপক্ষের

2 hours ago 3

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরার একটি ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক ছাত্রকে গুলি ও একই এলাকায় অন্য দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য আগামী মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এই দিন ঠিক করেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন করা হয়েছে। এই আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এরপর আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। পরে মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিন ঠিক করে ট্রাইব্যুনাল।

এছাড়া আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশের আগে আসামিপক্ষের আইনজীবীকে শুনানির অনুমতি চাইলে আদালত তাকে ওই দিন শুনানির অনুমতি দেন।

শুনানিতে আসামিপক্ষ বলেন, ‘আমার আসামিরা পুরোপুরি নির্দোষ। তারা কোনো অন্যায় নির্দেশ পালন করেননি। শুধুমাত্র বৈধ আদেশ মেনে দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু আমার আসামিদের ঘাড়ে অন্যের দায় চাপানো হয়েছে। অর্থাৎ উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ের মতো।’ এভাবেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিদের নির্দোষ দাবি করেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চার জনের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োজিত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

এদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাবিবুরসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল।

এদিন দুপুরে ট্রাইব্যুনালের অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। এরপর এ মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান প্রমুখ। এরপর শুনানি করেন পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তবে আংশিক শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা আসামি চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান। পরে মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য আগামী মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন আসামিপক্ষকে আরও কিছুক্ষণ শুনানির অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

শুনানিতে মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ থেকে নিজের ও আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে মো. আমির হোসেন বলেন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া কোনো অন্যায় বা গুলি করেননি। তারা পুরোপুরি নির্দোষ। কোনো হেলিকপ্টার কিংবা মারণাস্ত্রও ব্যবহার করেননি। এছাড়া কোনো স্থাপনাতেও আগুন দেননি। তাদের ঘাড়ে অন্যের দায় চাপানো হয়েছে।

এ সময় তার ডিসচার্জের গ্রাউন্ড বা আসামিদের অব্যাহতি চাওয়ার কারণ জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে ট্রায়ালে প্রমাণ করার কথা বলা হয়। তখন এই আইনজীবী বলেন, অব্যাহতির আবেদন মঞ্জুর করা না করার এখতিয়ার আদালতের। কিন্তু আমার আসামিরা দোষ না করলেও অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন। এ ছাড়া, মশিউর রহমানও আহত হয়েছিলেন ওই আন্দোলনে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আন্দোলনে গুলি করাটাও বেআইনি। তখন আমির হোসেন বলেন, আমার আসামিরাও খিলগাঁও থানায় যাননি। তারা রামপুরা থানায় কর্মরত ছিলেন। তাহলে সেখানে কীভাবে গুলি করবেন।

শুনানি শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় অভিযোগ গঠন নিয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। স্টেট ডিফেন্সের আইনজীবীও নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। তবে আংশিক শুনানি করেছেন ট্রাইব্যুনালে হাজির থাকা একজন আসামির আইনজীবী। তার বাকি শুনানি আগামী মঙ্গলবার হবে। একই সঙ্গে ওই দিন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেবেন আদালত।

এদিন মামলায় পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তার উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি হয়।

এর আগে, ১ সেপ্টেম্বর পলাতক চার আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২৫ আগস্ট পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১০ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ৭ আগস্ট প্রসিকিউশনের পক্ষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রামপুরায় হোটেলে কাজ শেষে ঢাকায় থাকা ফুফুর বাসায় ফিরছিলেন আমির হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়কের দুই পাশে পুলিশ-বিজিবির গাড়ি দেখে ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে পাশে থাকা একটি নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে ওঠেন তিনি। ওই সময় পুলিশও তার পিছু নেয়।

এক পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ওই নির্মাণাধীন ভবনের ছাদের কার্নিশের রড ধরে ঝুলে থাকেন আমির। কিন্তু তাকে দেখে ফেলে পুলিশ। পরে তার ওপর ছয়টি গুলি ছোড়েন এক পুলিশ সদস্য। এতে তিনতলায় পড়ে গেলে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করেন। এরপর বনশ্রীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ওই দিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন ভুক্তভোগী এই তরুণ।

এছাড়া, একই দিন রামপুরার বনশ্রী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নাদিম ও মায়া ইসলাম নিহত হন। একই সঙ্গে মায়া ইসলামের ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসা গুলিবিদ্ধ হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিলেও এখনও কথা বলতে পারছে না এই শিশু।

গত ২৬ জানুয়ারি রাতে আমির হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো সাবেক এএসআই চঞ্চল সরকারকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে গ্রেপ্তার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল।

এফএইচ/কেএএ/

Read Entire Article