‘পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে অনেক হুমকি পেয়েছি, এখনো পাচ্ছি’

1 month ago 9

রাজধানীর পল্লবী থানা হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডিত তৎকালীন এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদের দণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন দণ্ডিত এএসআই মো. রাশেদুল হাসানকে ১০ বছর দণ্ড ও সোর্স রাসেলকে সাত বছরের দণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন।

সোমবার (১১ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

হেফাজতে নির্যাতনে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন জনি হত্যার মামলায় হাইকোর্টের রায়ে পর সোমবার (১১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন জনির মা, ভাই ও স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়ে।

জনির মেয়ে রিতিকা আক্তার বলে, ‘আমরা ১২ বছর নির্ঘুম কাটিয়েছি। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাওয়ায় অনেক হুমকি পেয়েছি। এখনো হুমকি-ধমকি পাচ্ছি। আমরা জীবনের নিরাপত্তা চাই। এত বছর পর রায় পেলাম আমরা, কিন্তু পুরোপুরি রায় পেলাম না। কতটা আতঙ্কে ভুগছি আমরা, বহু রাত আমাদের ঘুমহীন কেটেছে আতঙ্কে। কত রাত আমরা কষ্টে কাটিয়েছি। বিভিন্ন মানুষ আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এটা আমাদের পরিবার জানে আর ওপরে আল্লাহ জানেন, পুলিশের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি আমরা।’ এ সময় জনির স্কুলপড়ুয়া ছেলেও কথা বলে।

জনির মা বলেন, ‘আমার ছেলের জীবন তো শেষ ,ছেলেকে হারিয়েছি। আর তো ফিরে পাবো না।’ এরপর জনির মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নায় ভেঙে পড়েন জনির ভাই রকি ও মেয়ে রিতিকাও।

জনির ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই। পুলিশের নাম না জানার কারণে অনেককে আসামি করতে পারিনি। তারা ছাড়া পেয়েছে। সবার দণ্ড হয়নি, কেউ কেউ বাদ এবং খালাস পেয়েছে। আমাদের কত কষ্ট হয়েছে এই মামলা পরিচালনা করতে এবং প্রমাণ করতে।’ হাতাশায় দেশ ছাড়তে চান বলেও জানান তিনি।

রকি কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ধন্যবাদ দিতে চাই গণমাধ্যমের ভাইদের। আমি পরিপূর্ণ রায় পাইনি। ছয়-সাতজন পুলিশ সদস্য মেরেছে, কার নাম কী আমি জানি না। আমি পরে তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে ছবি দেখে যাদের চিনেছিলাম সেভাবে বলেছি। একজন পাবলিক মারলে চেনা যায়, পুলিশ সদস্যদের চেনা যায় না। ২০২০ সালে রায় দেওয়ার পর কিছুটা সন্তুষ্ট ছিলাম। এত বছর পর আবার রায়ে একজনের দণ্ড বহাল, একজনের দণ্ড কমানো হয়েছে আর একজনের খালাস হয়েছে। রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই।’

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট একজনকে খালাস আবার একজনের সাজা কমিয়ে দিয়েছেন। যাক, ওপরে আল্লাহ আছে, আর কী বলবো। ভিকটিম-সাক্ষীকে হুমকি দেওয়া বিচার বাধাগ্রস্ত করার শামিল।’

রকি বলেন, ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন-২০১৩ এ ভিকটিম পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়নি। আমি এই আইন সংশোধনের দাবি জানাই। আইনে আমরা সন্তুষ্ট না। জানি না কী হবে, সারা আপা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। বাসায় গিয়ে আমিনুল ভাই আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছে, আমরা তোমার পাশে আছি। রাজনৈতিক নেতারা সান্ত্বনা দেয়। তাদের নিজেদের স্বার্থে।’

‘আবার দুই দিন আগেও আমাকে বাসায় এসে হুমকি দিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বলবো, আমাকে যদি কেউ বিদায় দিয়ে দিতো দেশ থেকে।’

এর আগে রাজধানীর পল্লবীতে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন জনি হত্যা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান ও এএসআই কামরুজ্জামানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। অপর আসামি সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল হাসানের যাবজ্জীবন দণ্ড থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

একই সঙ্গে আরেক আসামি পুলিশের সোর্স রাসেলকে ৭ বছরের সাজা থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। অপর আসামি সুমন সাজাভোগ করে আগেই কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন-২০১৩ অনুযায়ী হাইকোর্টে এটিই প্রথম রায়। রায়ে যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামিদের দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ভিকটিম জনির পরিবারকে দিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টে ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত আসামি এএসআই রাশেদুল হাসানকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এফএইচ/ইএ/জেআইএম

Read Entire Article