ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় উদ্যাপিত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান গঙ্গাস্নান ও শ্রী কৃষ্ণের রাস লীলা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে শেষ হয় তিন দিনব্যাপী এ রাস মেলা উৎসবটি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে বলে জানিয়েছে রাস উদ্যাপন কমিটি।
রাস উদ্যাপন কমিটির সভাপতি কাজল বরন দাস কালবেলাকে জানান, শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ভোর ৫টা ৪৩ মিনিটে শুরু হয়েছে পূর্ণিমা। এটা থাকে রাত ৩টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। তাই পূর্ণিমার লগ্ন লাগা থেকেই কুয়াকাটায় আগত ভক্তরা উলু ধ্বনি দিতে দিতে সমুদ্রে গঙ্গাস্নান শেষ করেন।
তিনি আরও জানান, এবারে সমুদ্রে গঙ্গাস্নান শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে এবং শনিবার ভোরে তা শেষ হয়েছে। এবারে একত্রে ভক্তরা স্নান করেনি। তবে সমুদ্রে স্নান শেরে শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণের যুগল দর্শন শেষে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে শুরু করেন।
জানা যায়, মানবতা রক্ষায় দ্বাপর যুগে কংস রাজাকে বস করে পূর্ণিমা তিথিতে ঘটে রাধা-কৃষ্ণের পরম প্রেম। সেই থেকেই মূলত রাস উৎসবের প্রচলন শুরু হয়। তবে সত্য ও সুন্দরের জয়ের আকাঙ্ক্ষায় প্রায় ২০০ বছর ধরে কুয়াকাটা ও কলাপাড়ায় রাস উৎসব উদ্যাপন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এবারের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় হাজারো ভাসমান দোকানিরা রঙ-বেরঙের বাহারি মেলার সামগ্রীর পসরা বসিয়েছিল। দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় মুগ্ধ করেছে আগত ভক্তদের।
খুলনা থেকে আসা পুণ্যার্থী সজল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পরিবারের সব সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে স্নানে এসেছি। জাগতিক অনেক পাপ হয়ে থাকে আমাদের তাই পবিত্র হওয়ার জন্য গঙ্গায় আসছি। তবে এ বছর এখানে আসলেও বিগত বছরগুলোতে আমরা দুবলার চরে রাস উদ্যাপন করেছি।
বরিশাল থেকে আসা পুণ্যার্থী সম্রাট কর্মকার বলেন, রাতভর এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করেছি। এ অনুষ্ঠান থেকে ভোররাতে পুণ্যস্নান করবো। তাই প্রতি বছরের ন্যায় বছরও কুয়াকাটায় আসা। আসা করছি, পূন্যস্নানের মাধ্যমে সকল জাগতিক পাপ দূর হয়ে যাবে।
রাস উৎসবে অংশ গ্রহণ করা সৌমির বলেন, সারা বছর অপেক্ষা করি এ দিনটির জন্য। আমি ৫ বছর ধরে স্নানে আসি এবং আমি আমার মানত করা পূজা দেই গঙ্গায়। যাতে গঙ্গা মা আমাকে মঙ্গল করে।
রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে এবারের আবাসিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টে ব্যাপক ভিড় ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাস মেলায় আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আনসার ভিডিপি, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছিল পর্যটন নগরী কুয়াকাটাকে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোস্টের মাধ্যমে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবেই শেষ করতে সক্ষম হলো এবারের আয়োজনটি।
কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন কালবেলাকে জানান, শুক্রবার ভোর ৫টা ৪৩ মিনিটে পূর্ণিমার লগ্ন শুরু হওয়ার পর পরই বেশিরভাগ পুণ্যার্থীরা স্নান সেরে যার যার গন্তব্যে চলে গেছে। আবার অনেকে পূর্ণিমার লগ্ন শেষ হওয়া পর্যন্ত স্নান শেরে শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে কুয়াকাটা ত্যাগ করবেন।