পৃথিবীর এখন দুটি চাঁদ

10 hours ago 5

৪৫০ কোটি বছর ধরে চাঁদ পৃথিবীর সঙ্গে রয়েছে। চাঁদের রূপ দেখে প্রশংসায় গান, ছড়া, কবিতা লিখেছেন বহু কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, পৃথিবীর এখন একটি নয়, দুটি চাঁদ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, 'এই দ্বিতীয় চাঁদ থাকবে অন্তত ২০৮৩ সাল পর্যন্ত'

হাওয়াইয়ের প্যান স্টারস মানমন্দিরের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেপ্টেম্বর মাসে নতুন এই 'কোয়াজি মুন' এর সন্দেহ পান। 'কোয়াজি মুন' হলো, মহাজাগতিক বস্তু বা গ্রহাণু, যা পৃথিবীর মতো একই কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, কিন্তু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা নয়। কেউ কেউ একে 'আধা চাঁদ' বলে ডাকেন। বর্তমানের এটি পৃথিবী থেকে ৫৯ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘২০২৫ পিএন৭’।

গবেষকরা ব্যাখ্যা করে জানান, এটি আসলে একটি গ্রহাণু বা এস্ট্রয়েড। এটি ১৯৬০-এর দশক থেকে সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর মতোই একটি কক্ষপথে ঘুরপাক খাচ্ছে।

৬২ ফুট বা ছয়তলা অট্টালিকার সমান এই 'কোয়াজি মুন' পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা বাকি ছয়টি কোয়াজি মুনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তবে স্থির নয়, আধা চাদটির অবস্থান পরিবর্তন হবে।

তবে আমাদের চাঁদের মতো এটিকে খালি চোখে দেখা যাবে না। প্রয়োজন ভালো মানের টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপের প্রথম দেখায় এটিকে দেখলে মনে হবে 'কোয়াজি মুন' পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে। তবে এটি পৃথিবীর মতো একই কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে, কিন্তু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা নয়।

১৯৯১ সালে প্রথম 'কোয়াজি স্যাটেলাইট' আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। স্যাটেলাইটের দেখায় তখন বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, 'এটি কোন ভিনগ্রহী প্রোব (ভিনগ্রহের প্রাণীদের পাঠানো যন্ত্র) হতে পারে।'

তিন দশক পর এসে গবেষকরা জানিয়েছেন, মূলত এই বস্তুগুলো প্রাকৃতিক। সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ও চাঁদ যেমন ঘুরছে, সেই একই পথে বা কাছাকাছি এই কিছু ছোট ছোট পাথুরে বস্তু বা গ্রহাণু ঘুরছে। এবং পৃথিবী-চাঁদের কক্ষপথের আশেপাশে বলয় তৈরি করে থাকছে।

তবে নতুন এই প্রতিবেশী বেশি দিনের অতিথি নয়। খুব শীঘ্রই ঠিক মহাবিশ্বের কোথাও হারিয়ে যাবে। এর আগে আবিষ্কৃত আরেক বিখ্যাত কোয়াজি মুন 'কামোওয়ালেওয়া' পৃথিবী সম্পর্কিত কক্ষপথে প্রায় ৩৮১ বছর ধরে আছে বলে জানা যায়।

কোয়াজি মুনগুলো 'আর্জুনা' বিশেষ শ্রেণির মহাজাগতিক বস্তুর অন্তর্গত। যা সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর সঙ্গে প্রায় একই গতিতে চলাচল করে।

মাদ্রিদের কমপ্লুতেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-লেখক কার্লোস দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস বলেন, 'এই নতুন কোয়াজি মুনটি ছোট, ম্লান এবং পৃথিবী থেকে দেখার তেমন উপযোগী নয়। তাই এতদিন এটি নজরে আসেনি।

তথ্যমতে, 'কোয়াজি মুন' ছাড়াও পৃথিবীকে মাঝে মাঝে সাময়িকভাবে ঘিরে রাখে 'মিনিমুন'। এই মিনিমুন আসে সাময়িক সময়ের জন্য। এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি মিনিমুনের সন্ধান পাওয়া গেছে, তবে বর্তমানে কোনোটিই নেই।

দ্য প্ল্যানেটারি সোসাইটির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, 'কোয়াজি মুন' ও 'মিনিমুন' আমাদের মহাকাশ-প্রতিবেশের অংশ। নিয়মিত গবেষণা করলে এদের উৎপত্তি কোথায় সেটাও জানা যেতে পারে।' বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, 'এগুলো হয়তো প্রধান গ্রহাণু বলয় থেকে এসেছে, কিংবা চাঁদের উপর আঘাতের ফলে বা বড় কোনো বস্তুর ভেঙে যাওয়া থেকে সৃষ্টি হয়েছে।'

তথ্যসূত্র: ডেইলি মেইল

এএমপি/এমএস

Read Entire Article