দৈনন্দিন জীবনে আমাদের নিয়মিতই পেট্রোল পাম্পে বা তার আশেপাশে যেতে হয়। গিয়ে নিশ্চয় আপনিও ‘ধুমপান নিষেধ’ বা ‘বিপদজনক’ জাতীয় সাবধানতাবাণী লেখা দেখেছেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত চোখের সামনে থাকার কারণেই হয়তো আমরা অনেকসময় ভুলে যাই যে, এই ফুয়েল ফিলিং স্টেশন বা পেট্রোল পাম্প আসলে কতটা বিপদজনক একটি জায়গা।
সম্প্রতি (১৮ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালী এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পাম্পে সাবধানতা মোটেই হালকা করে দেখার বিষয় না।
গাড়ি, মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিতে গ্যাস ও তেল ভরতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ সেখানে আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু পেট্রোল পাম্পের আশপাশে একটু অসাবধানতা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
১. আগুনের ঝুঁকি সবসময়ই আছে
পেট্রোল, অকটেন বা ডিজেল – সবই অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ। সামান্য স্পার্ক বা খোলা আগুনের সংস্পর্শে এলেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। এজন্যই পাম্প এলাকায় সিগারেট ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, লাইটার, দিয়াশলাই কিংবা গ্যাস লাইটও ব্যবহার করা যাবে না। এই নিয়মটি অত্যন্ত কঠোরভাবে মানা দরকার।
‘ধুমপান নিষেধ’ লেখা দেখে সাইনটি থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে হাতের সিগারেটটি ধরিয়ে ফেলেন অনেকে। ভাবেন ‘দূরে এসেই তো দাঁড়ালাম’। কিন্তু এটি কোনো সৌজন্যমূলক নিয়ম না। একটি পাম্পে আপনার পায়ের নিচের থাকে তেল ও গ্যাসের স্টোরেজ অথবা পাইপ, সেখান থেকে মিটারের মাধ্যমে আপনার গাড়িতে ফুয়েল দেওয়া হয়। তাই যে কোনো ধরনের আগুনের ব্যবহার করতে হলে পাম্পের এলাকার বাইরে চলে যান।
২. মোবাইল ফোনের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ
অনেকেই গাড়ি ভরার সময় ফোনে কথা বলেন বা ভিডিও করেন। কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় আমরা সেদিনে মনোযোগী হয়ে পড়ি, হাতের কাজটির দিকে পুরুত্ব কমে যায়। তাই পাম্পে যখন আপনি জ্বালানির মতো বিপদজনক একটি পদার্থ নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন, তখন মোবাইল ব্যবহার না করাই ভালো।
৩. বাষ্প নিঃশ্বাসের ক্ষতি
পেট্রোল বা অকটেন ঢালার সময় যে গন্ধ বের হয়, তা আসলে এক ধরনের ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড (ভিওসি)। এনভাইরনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই বাষ্প দীর্ঘক্ষণ শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে গেলে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি বেশি ক্ষতিকর। তাই জ্বালানির খুব কাছাকাছি মুখ নেবেন না কখনো।
৪. হঠাৎ বিস্ফোরণের ঝুঁকি
বাংলাদেশে অনেক সময় দেখা যায়, কেউ প্লাস্টিকের বোতল বা খোলা পাত্রে জ্বালানি নিচ্ছেন। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সঠিক সুরক্ষা না থাকলে হঠাৎ করে চাপ তৈরি হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই সবসময় নির্ধারিত জ্বালানি ট্যাংক বা নিরাপদ ক্যান ব্যবহার করতে হবে।
দুর্ঘটনা সবসময়ই অপ্রত্যাশিত, তবে নিরাপত্তার নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি অনেকটাই ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারবেন-
>> গাড়িতে জ্বালানি ভরার সময় ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন।
>> সিগারেট, আগুন বা লাইটার ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
>> জরুরি অবস্থা ছাড়া পাম্পে বেশি ভিড় এড়িয়ে চলুন।
>> জ্বালানি ভরার সময় শিশুকে গাড়ির বাইরে নামতে দেবেন না।
পেট্রোল পাম্প আমাদের জীবনকে সহজ করে দিলেও এখানে অবহেলা মানেই বিপদ। তাই সামান্য সচেতনতা বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে ইবাঁচাতে পারে।
তথ্যসূত্র: এনভাইরনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি, বাংলাদেশ অগ্নি নির্বাপক অধিদপ্তর, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি, ন্যাশনাল ফায়ার প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন
এএমপি/জেআইএম