পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখালেন রাবি শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ কার্ড প্রদর্শন করেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আহ্বানে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘জনে জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে, লড়াই হবে একসাথে’, ‘আপস না মৃত্যু, মৃত্যু মৃত্যু’, ‘তুমি কে? আমি কে? মেধাবী মেধাবী’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
কর্মসূচি থেকে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে শিক্ষকদের সঙ্গে পোষ্য কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্কের আহ্বান জানিয়েছেন সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাস মার্ক ৪০। সেখানে পাস মার্কেরও অর্ধেক ১৯ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে এক শিক্ষকের ছেলে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছে। দেখা গেছে পরে তাকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ৩ দশমিক ৭০ নম্বর দেওয়া হয়েছে। এটা হচ্ছে কিছু অযোগ্য মানুষদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানানোর মেশিন। সে মেশিনটাকে আমরা বিলুপ্ত করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আজকে আমরা লাল কার্ড প্রদর্শন করলাম। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যদি তারা তাদের পোষ্য কোটার পক্ষে যুক্তি দেখাতে পারে তাহলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটাকে মেনে নেব। আর যদি কোনো যুক্তি দেখাতে না পারে তাহলে সেখান থেকে পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা করতে হবে। এই প্রশাসন পোষ্য কোটা নিয়ে টালবাহানা করছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছি। আর যারা এই পোষ্য কোটা নিয়ে টালবাহনা করবে তাদেরকে সরাতেও আমাদের ১০ মিনিট সময় লাগবে না।
শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম পিটার বলেন, ১৯৯৩ সালে তৎকালীন যে উপাচার্য ছিলেন তার ছেলেকে ৩৭ মার্কসেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ন্যূনতম মার্ক ছিল ৪০। পরবর্তীতে দেখা গেছে ২২, ২৫, ২৮, ৩২ এবং ৪০ পায় না এমন ছাত্র-ছাত্রীদের কোটায় ভর্তি করা হয়েছে। পরে এসব ছাত্রছাত্রীরা সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ফার্স্ট-ক্লাস ফার্স্ট এবং সেকেন্ড হয়েছে। কীভাবে হয়েছে? তেল দিয়ে। এদেরকেই পরবর্তী সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষকের ছেলে বা মেয়ে কোটায় ভর্তি হোক।
বিক্ষোভ সমাবেশ ও লাল কার্ড প্রদর্শনীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর রাবির ভর্তি পরীক্ষায় তিন শতাংশ পোষ্য কোটা রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিন রাতেই এই কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা। পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনকে সভাপতি করে ২০ সদস্যের কোটা পর্যালোচনা কমিটি গঠিত হয়। তবে এ কমিটি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কার্যকরী কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।