গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ সবার জন্য সমান ও সমুন্নত রাখার তাগিদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ, দাখিল ও জমাদানের সময় বাড়িয়ে বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেল ৫টা পর্যন্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে এর আগে প্রায় সব সংগঠন প্যানেল ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের কাগজে কলমে শেষ দিন ছিল সোমবার (১৮ আগস্ট)। এদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়ন সংগ্রহ করতে পেরেছেন। যদিও রাতে আবারও একদিন বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সময় একদিন বাড়লেও, বাড়তি দিনেরও অর্ধেক গত হয়ে গেছে। ছাত্রশিবির, বামপন্থী সংগঠনসহ প্রায় সব সংগঠন প্যানেল ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক প্যানেল ঘোষণা দিতে পারেনি ছাত্রদল। তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এককভাবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সোমবার।
সোমবার (১৮ আগস্ট) প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকসুর বিভিন্ন পদের জন্য মোট ৫৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া ১৮টি হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ফরম সংগ্রহ করেছেন ১ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থী।
এদিকে, ছাত্রদলের এই প্যানেল দিতে না পারার পেছনে কারণ কী হতে পারে, তা নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে নানান আলোচনা। প্যানেল দিতে না পারায়, অনেকে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করছেন। আবার কেউ বলছেন, অত্যাধিক হাইকমান্ড নির্ভরতাই এর মূল কারণ।
গেলো কয়েকদিন আগে ছাত্রদলের ঘোষিত হল কমিটি জুনিয়র নেতাকর্মীদের দিয়ে গঠন করা হয়। এ নিয়ে এরইমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের জন্য লড়াই করে আসা তুলনামূলক সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। আবার ডাকসুতেও যদি জুনিয়র নেতাকর্মীদের প্রার্থী করা হয়, সেক্ষেত্রেও তারা বঞ্চিত হবেন বলে দাবি করছেন ফনেকে। ফলে একটি কোন্দল হওয়ার শঙ্কা করছেন তারা। আবার বিভিন্ন গ্রুপভিত্তিক পদের ভাগ-বাটোয়ারা না মেলায়ও সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০১৪-১৫ সেশনের এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমাদের লড়াইটা শুরু হয়েছিল। এর আগের হল কমিটিতে আমরা বঞ্চিত হয়েছি, এবারের হল কমিটিতেও আমাদেরকে রাখা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতেও আমাদেরকে বিবেচনা করা হয়নি। ডাকসু উপলক্ষে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো আমাদেরকে বিবেচনা করবে সংগঠন। কিন্তু দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস থাকলেও আমাদেরকে অবমূল্যায়নের ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চলছে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতেই পারে।
সাংগঠনিকভাবে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল না দেওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে নেতাকর্মীরা প্রায় সবাই দুটি করে (হল এবং কেন্দ্রীয়) মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দিলেই কেবল প্যানেলের চূড়ান্ত ঘোষণা জানা যাবে। তার আগে সবাই ফরম সংগ্রহ করে রাখছেন যাতে পরবর্তী সময় প্যানেলে নাম আসলে কোনো ঝামেলা না হয়।
সোমবার ছাত্রদলের সম্ভাব্য বেশ কয়েকজন ভিপি-জিএস প্রার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ফরম সংগ্রহ করলাম, কিন্তু মূল সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলোতে সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা। তানিয়া সুলতানা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) প্যানেল ঘোষণা করেছে তাদেরর ছেলেমেয়েরা। শিবিরের প্যানেল ঘোষণা করেছে শিবিরের ছেলেপেলেরা। বামদের প্যানেল ঘোষণা করেছে বামপন্থী নিজেরা। স্বতন্ত্রদের প্যানেল ঘোষণা করেছে তারাই। শুধু ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা করবেন দেশনায়ক তারেক রহমান। অথচ ইলেকশন হচ্ছে ক্যাম্পাসে, ইলেকশন করছে শিক্ষার্থীরা নিজেরা। ভোটারও শিক্ষার্থীরা, প্রার্থীও শিক্ষার্থীরা। নিজেদের প্যানেল মধুতে বসে নিজমুখে ঘোষণা দিতে পারেন না, লন্ডন থেকে দেওয়া লাগে যদি, এতটুকুও যদি নিজেরা স্বাধীন না হন তাহলে আপনারা জিতলে ডাকসু চালাবে কে? দেশনায়ক নিজেই?
এদিকে, ফরম সংগ্রহ এবং জমাদানের সময় একদিন বাড়ায়, সময় পেয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে এই সময় বাড়ানোকে পক্ষপাতিত্ব হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। এ নিয়ে সোমবার রাতে তারা একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছে। সংগঠনটির দাবি, এখন পর্যন্ত প্যানেল ঠিক করতে না পারা ছাত্রদলকে সুবিধা দিতেই একদিন সময় বাড়ানো হয়েছে।
তবে সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে শিগগির প্যানেল চূড়ান্ত করে জনসম্মুখে ঘোষণা করা হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। অনিশ্চয়তা নয় বরং নিশ্চয়তা নিয়েই ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে চান তারা। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও খুব দ্রুতই প্যানেল দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন সংগঠনটির নেতারাও।
এর আগে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে সোমবার রাতেই প্যানেল চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছিলেন ছাত্রদলের জসীমউদ্দীন হল শাখার আহ্বায়ক তানভীর বারী হামিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রাতে আমাদের প্যানেল চূড়ান্ত হবে। তবে আজ যেহেতু মনোনয়নপত্র নেওয়ার শেষ দিন, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তা সংগ্রহ করেছি।’
ছাত্রদলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ভিপি পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন আবিদুল ইসলাম খান ও জিএস পদে তানভীর বারি হামীম।
তফসিল অনুযায়ী, ডাকসুতে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ আগস্ট। পরদিন প্রকাশ করা হবে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা। চূড়ান্ত তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭১ জন ও ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন। আর ভোট হওয়ার কথা ৯ সেপ্টেম্বর।
এমএইচএ/এসএনআর/জিকেএস