বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহেদ জোবায়ের লরেন্স তার জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এসআই শাহেদ জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, মামলার আলামত হিসেবে তিনি যে অডিও রেকর্ড পরীক্ষা করেছেন তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) এসএম মাকসুদ কামালের কথোপকথন ছিল।
এ ছাড়া মঙ্গলবার আরও চারজন তাদের জবানবন্দি পেশ করেন। এরপর তাদের জেরার কার্যক্রম শেষ করা হয়। মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ঠিক করেছেন আদালত।
মামলার ৪৫তম সাক্ষী শাহেদ জানান, গত ১২ মে মামলার বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার আলামত হিসেবে একটি সিডি ও একটি ডিভিডি ল্যাবে পাঠান। সিডিতে শেখ হাসিনা এবং মাকসুদ কামালের তর্কিত বা সন্দেহজনক কথোপকথন সংরক্ষিত ছিল। আর ডিভিডিতে উভয়ের প্রামাণ্য কণ্ঠস্বর সংরক্ষিত ছিল। ল্যাবে যাচাই করে নারী কণ্ঠস্বরের সঙ্গে শেখ হাসিনার এবং পুরুষ কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মাকসুদ কামালের নমুনা কণ্ঠস্বরের মিল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ওই কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপশন বা লিখিত রূপ দেওয়া হয়। মতামতটি বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজে এসে শাহেদের দপ্তর থেকে নিয়ে যান।
এসআই শাহেদ জানান, কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সিআইডি ফরেনসিক ল্যাবে ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়ারে আই.আর অনুপাত (স্কোর) সাধারণত একের ওপর হলে বিতর্কিত কণ্ঠস্বর ও নমুনা কণ্ঠস্বর এক ও অভিন্ন মর্মে ধরে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় অনুপাত পাওয়া যায় শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৭৫১৪৫ এবং মাকসুদ কামালের ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৬৪১৫৩।
পরে শাহেদকে জেরা করেন মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমীর হোসেন।
এসআই শাহেদের আগে ৪২তম সাক্ষী এসআই মো. গোলাম ইফতেখার আলম জবানবন্দি দেন। তিনি সিআইডির আলোকচিত্র শাখায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
এসআই ইফতেখার জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১১ মার্চ ১২টি ভিডিওসহ একটি পেনড্রাইভ তাদের দপ্তরে পাঠান এবং ভিডিওগুলো এআই জেনারেটেড কি না তা পরীক্ষার জন্য বলেন। পরীক্ষায় ভিডিওগুলো এআই জেনারেটেড বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং এ সংক্রান্ত মতামতসহ পেনড্রাইভটি ১৩ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।
এ ছাড়া সিআইডি ঢাকার ব্যালিস্টিক শাখায় বিশারদ হিসেবে কর্মরত ৪৩তম সাক্ষী শেখ নজরুল ইসলাম সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে গত ১০ মার্চ দুটি বুলেট ও তিনটি ধাতব পিলেট পরীক্ষার জন্য পাই। পরীক্ষা শেষে গত ১৯ মার্চ আমার মতামত সম্বলিত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট পাঠাই। আমি মতামত প্রস্তুত করেছিলাম ১৬ মার্চ।’
পরে ৪৪তম সাক্ষী মো. রুকুনুজ্জামান সাক্ষ্য দেন। তিনি বর্তমানে পুলিশ পরিদর্শক পদে সিআইডি ঢাকায় ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে কর্মরত। তিনি জানান, তিনি গত ১৫ জানুয়ারি মামলার বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে একটি ডিভিডি-আর ও একটি হার্ড ড্রাইভ আলামত হিসেবে নেন। সেগুলো পরীক্ষা করে শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস ও তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের কণ্ঠস্বরের মিল পান। সেই মতামতের সত্যায়িত কপি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন।
এফএইচ/একিউএফ