প্রকৌশলীদের মর্যাদা রক্ষায় আইইবি’র ৫ দফা দাবি

2 hours ago 4

দেশের প্রকৌশলীদের ন্যায্য অধিকার ও পেশাগত মর্যাদা রক্ষায় নতুন বিবৃতি দিয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)। এতে ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। আইইবি দেশের স্বার্থে সর্বদা প্রকৌশলীদের পেশাগত মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং ভবিষ্যতেও এই ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। 
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে সংগঠনের এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। 

আইইবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. সাব্বির মোস্তফা খান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়, আইইবি পর্যবেক্ষণ করছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের প্রকৌশল পেশাকে ঘিরে একটি মহল বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড, অযৌক্তিক পদক্ষেপ এবং বিভ্রান্তিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বায়নের এ যুগে যেখানে উন্নত দেশসমূহ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের মর্যাদা ও অগ্রাধিকার নিশ্চিত করে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে প্রকৌশলীদের পেশাগত অবস্থান তার বিপরীতে প্রতিফলিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় উন্নয়ন, অবকাঠামোগত, শিল্প, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য প্রকৌশলীদের যথাযথ নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, কর্মস্থলে নিরাপত্তা ও মর্যাদা অপরিহার্য। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে প্রকৌশল কর্মকাণ্ড পরিচালনা, সম্পাদন এবং তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে প্রকৌশলীরা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, যা উন্নত, সমৃদ্ধ ও টেকসই বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম ভিত্তি। এ অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন ও সম্মানিত করা সময়ের দাবি।

এতে আরও বলা হয়েছে, বুধবার (২৭ আগস্ট) প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আক্রমণাত্মক পদক্ষেপে শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনায় আইইবি গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাতা এসব শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের আক্রমণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে প্রকৌশলীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং পেশাগত মর্যাদা রক্ষার লক্ষ্যে ‘প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন’ কর্তৃক উত্থাপিত দাবিসমূহের বিষয়ে আইইবি’র অবস্থান নিম্নরূপ-

১। জাতীয় বেতনস্কেল-২০১৫ এর ১০ম গ্রেডসহ সকল গ্রেড উন্মুক্ত রাখার পক্ষে আইইবি দৃঢ় মতামত ব্যক্ত করছে। তবে এ ক্ষেত্রে গ্রেডভিত্তিক ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা যেতে পারে, যেখানে যোগ্য ও উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্নরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। উক্ত মতামত বাস্তবায়িত হলে উন্নত, সমৃদ্ধ ও টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের পথকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আইইবি মনে করে।

২। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (নিয়োগ) বিধিমালা, ১৯৮১ অনুযায়ী ৯ম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী/সমমান পদে ১০ম গ্রেড থেকে ৩৩ ভাগ পদোন্নতির বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, কিছু কিছু মন্ত্রণালয়/সংস্থা/দপ্তর/অধিদপ্তরে উক্ত বিধিভঙ্গ করে ৩৩ ভাগের অধিক পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১০ম থেকে ৯ম গ্রেডে কিছু পদে নিয়ম বহির্ভূত/বিধি ভঙ্গ করে চলতি দায়িত্ব/অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে উক্ত দপ্তরসমূহে ৯ম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী/সমমান পদে প্রকৌশলীদের সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। তাই এ কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করার পাশাপাশি ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে পদোন্নতির সকল বিধি বাতিল করার জন্য আইইবি জোর দাবি জানাচ্ছে।

৩। সরকারের সকল মন্ত্রণালয়/দপ্তরে ৯ম গ্রেডের বিদ্যমান সহকারী প্রকৌশলী/সমমান পদের শূন্য পদসমূহ সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূরণ করার জন্য আইইবি জোর দাবি জানাচ্ছে।

৪। গত এক দশক বা তারও বেশি সময়ে জাতীয় উন্নয়ন বাজেট বহুগুণ বৃদ্ধি পেলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/দপ্তরের অর্গানোগ্রামে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রকৌশল পদ বৃদ্ধি করা হয়নি। তাই জরুরি ভিত্তিতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/দপ্তরে যৌক্তিক সংখ্যক নতুন প্রকৌশল পদ সৃষ্টি ও দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আইইবি জোর দাবি জানাচ্ছে।

৫। ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীগণ আইইবি’র সদস্য হওয়া সাপেক্ষে তাদের নামের পূর্বে ইঞ্জিনিয়ার/প্রকৌশলী শব্দ ব্যবহার করতে পারবে-এ মর্মে বিদ্যমান সরকারি গেজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আইইবি জোরালো দাবি জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে প্রকৌশলীদের অবদান সুস্পষ্ট, অপরিহার্য ও অবিস্মরণীয়। তাই তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং প্রকৌশল পেশার মর্যাদা রক্ষায় উল্লিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়ন সময়ের অনিবার্য দাবি। আইইবি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, উল্লিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়িত হলে প্রকৌশলীরা আরও উদ্দীপনা ও আন্তরিকতার সঙ্গে জাতীয় উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন।

Read Entire Article