প্রচারণায় এগিয়ে বিএনপির গউছ, মাঠে আছেন অন্যরাও

2 hours ago 7

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ছড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। হবিগঞ্জ-৩ আসনেও চলছে নির্বাচনি ডামাডোল। এখানে প্রচারে এগিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি কে গউছ। মাঠে আছেন অন্যরাও।

সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-৩ আসন। সদর আসন হওয়ায় জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হয় পুরো জেলা। এর ওপরই নির্ভর করে জেলার রাজনীতি। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চারবার এ আসনটি দখলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জি কে গউছকে প্রচারণা পর্যন্ত চালাতে দেয়নি তারা। একের পর এক হামলা চালানো হয়েছে। মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ দলটির নেতাদের।

এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে এ আসনে একক প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি কে গউছ। দীর্ঘদিন ধরেই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে নিজের অবস্থান গড়ে তুলেছেন এ নেতা। হবিগঞ্জ পৌরসভায় টানা তিনবার মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এমনকি কারাগারে বন্দি থেকেও একবার বিজয়ী হয়েছেন।

মূলত জি কে গউছ গত বছর থেকেই নির্বাচনি কার্যক্রমে নামেন। বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ক্রীড়াসামগ্রী, ঢেউটিন, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন। সভা-সমাবেশ, মতবিনিময় করছেন। এলাকায় এলাকায় কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচনি কমিটিও গঠন করেছেন।

আরও পড়ুন-
ভোটের হাওয়ায় এলাকায় ভিড় করছেন বিএনপির প্রবাসীরা
জয় পেতে মাঠে বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা, বিপরীতে ‘বড় হুজুর’

অন্যদিকে এ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির জেলা সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমেদকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গণঅধিকার পরিষদ দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমানকে মনোনয়ন দিয়েছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী হেলাল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আলহাজ মহিব উদ্দিন আহমদ সোহেল এরই মধ্যে ভোট চেয়ে বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করছেন এবং লিফলেট বিতরণ করছেন।

জানা গেছে, হবিগঞ্জ-৩ আসনে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছয়বার, জাতীয় পার্টির তিনবার, বিএনপির দুবার ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছেন।

১৯৮৬ সালে এ আসনে ন্যাপের চৌধুরী আব্দুল হাই, ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির আবু লেইছ মো. মুবিন চৌধুরী এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির আতিক উল্লাহ জয়লাভ করেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আবু লেইছ মো. মুবিন চৌধুরী জয় পান। ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের শাহ এএমএস কিবরিয়ার কাছে হেরে যান মুবিন চৌধুরী।

কিন্তু ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন কিবরিয়া। একই বছরের উপ-নির্বাচনে বিএনপি থেকে জয়ী হন মুবিন চৌধুরী। এরপর ২০০৮ সাল থেকে এই আসন দখলে রাখেন আওয়ামী লীগের আবু জাহির। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন তিনি।

সম্প্রতি বিএনপি সিলেট বিভাগে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। তখন হবিগঞ্জ-৩ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি কে গউছ, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হক সেলিম ও বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. আহমুদুর রহমান আবদাল। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সাবেক প্রেস সচিব ও পরে উপদেষ্টা হওয়া লন্ডনে অবস্থানরত মুখলেছুর রহমান চৌধুরী অনলাইনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করেন। তবে এদের কেউই নির্বাচনি মাঠে নেই।

আরও পড়ুন-
আ’লীগের ঘাঁটিতে বিএনপির কোন্দল, সুবিধা পেতে পারে জামায়াত
প্রবাসে বিএনপির ওসমান ফারুক, মাঠে সরব জামায়াতের জেহাদ খান

জি কে গউছ বলেন, ২০০৮ সালে একটি ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন ছিল। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়, ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালে হয়েছে আমি আর ডামির নির্বাচন। ২০১৮ সালে দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এক ঘণ্টায় আমি পেয়েছিলাম ৭০ হাজার ভোট।

তিনি বলেন, ‘কয়েক দফায় ১ হাজার ৫১৭ দিন আমি কারাগারে ছিলাম। ছাত্রদল ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। টানা তিনবার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। প্রত্যেক নেতাকর্মীরই আকাঙ্ক্ষা থাকে। আমারও আছে। দল যদি আমাকে বিবেচনা করে, তাহলে আমি নির্বাচন করবো।’

এছাড়া হাজি এনামুল হক, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, জালাল আহমেদ, সফিকুর রহমান সিতুসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই নির্বাচনি প্রস্তুতি হিসেবে এ আসনের বিভিন্ন স্থানে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

তারা জানান, হবিগঞ্জ-৩ আসন কখনোই আওয়ামী লীগের একক আসন ছিল না। ২০০৮ সালে কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে আসনটি তারা দখলে নেয়। এরপর থেকে রাতের ভোট ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আসনটি তারা দখল করে রাখে। আগামী নির্বাচনে একটি সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে বিএনপি বিপুল ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হবে বলে তারা মনে করেন।

আরও পড়ুন-
বিএনপির ঘাঁটিতে জয়ের স্বপ্ন জামায়াতের
জামায়াতসহ ৫ দলে একজন করে প্রার্থী, বিএনপিতে ছড়াছড়ি

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমেদ বলেন, ‘এটি আমাদের প্রাথমিক মনোনয়ন। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা রাখছি। এটি অব্যাহত থাকবে। আর মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করবো।’

এফএ/এমএমএআর/এমএফএ/এমএস

Read Entire Article