প্রতিদিন কোটি টাকার দিনাজপুরের কলা যাচ্ছে সারাদেশে

3 weeks ago 9

দিনাজপুরে প্রতি বছর কলার আবাদ বাড়ছে। ফলনও হচ্ছে বাম্পার। ভালো ফলনে কৃষক যেমন খুশি; তেমনই ভালো দাম পাওয়ার কারণে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। পাশাপাশি কলা বিক্রিতে কৃষকদের হয়রানিও কমেছে। কলা ব্যবসায়ীরা হাট ছাড়াও ক্ষেত থেকে কলা কিনে ট্রাকযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। প্রতিদিন কোটি টাকার কাঁচা কলা চলে যাচ্ছে এসব স্থানে। হাটে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার কলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

জানা যায়, দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার সব উপজেলায়ই কম-বেশি কলা চাষ করা হয়। এরমধ্যে ৬৫-৭০ শতাংশ কলা চাষ হয় জেলা সদর, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, কাহারোল ও বিরল উপজেলায়। শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত তিন মাস গাছ থেকে কলা নামানো হয়। এ সময় কাহারোল উপজেলার দশমাইল মোড়ে বসে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলার হাট। নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাঁকুরগাও জেলার চাষিরা এই হাটে কলা নিয়ে আসেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কলা কিনতে আসেন দশমাইল হাটে।

রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ভ্যান, নসিমন, ইজিবাইক, পিকআপে করে এই হাটে বিক্রির জন্য কলা আনেন চাষি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনা শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ট্রাকে কলা লোড হয়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পরদিন সকাল ৮টার মধ্যে শেষ হয় বেচাকেনা। ট্রাক ছুটে চলে ঢাকার বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, ওয়াইজঘাট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা শহরে। দশমাইল হাটে মেহেরসাগর, মালভোগ ও চিনি চাম্পাসহ বিভিন্ন জাতের কলার দেখা মেলে। জেলায় উৎপাদিত মেহেরসাগর কলার খ্যাতিও দেশজুড়ে। সবরি, সুন্দরী (মালভোগ), চিনি চাম্পা কলার চাষও হয় এখানে।

প্রতিদিন কোটি টাকার দিনাজপুরের কলা যাচ্ছে সারাদেশে

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছরে খরিপ-১ ও রবি মৌসুমে জেলায় কলার আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ১১০০ হেক্টর। এবার ২৫০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ বেশি হয়েছে।

কলা চাষিরা বলেন, ‘অন্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে খরচ কম লাভ বেশি হয়। তাই প্রতিবার কলা গাছই লাগাই।’

দশমাইল কলার হাটের ইজারাদার জানান, মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা হয় এ হাটে। প্রতিদিন গড়ে ১৬-২০টি ট্রাক লোড হয়। একটি বড় ট্রাকে সর্বনিম্ন ৭০০ কাঁদি কলা ধরে। ছোট ট্রাকে ৪৫০ কাঁদি কলা ধরে। মৌসুমে এ হাটে লোড আনলোডের কাজ করেন অন্তত ১০০ শ্রমিক। এ ছাড়া কিছু ব্যবসায়ী সরাসরি ক্ষেত থেকে কলা কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান। এতে দিনাজপুরে প্রতিদিন কােটি টাকার কলা বেচাকেনা হয়ে থাকে।

কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামের কলাচাষি আবুল হোসেন জানান, তিনি এবার ৪৮ শতক জমিতে কলা চাষ করেছেন। দশমাইল কলার হাটে একশ কলার কাঁদি এনে ৬২ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।

প্রতিদিন কোটি টাকার দিনাজপুরের কলা যাচ্ছে সারাদেশে

একই গ্রামের কলা চাষি সাদেক আলী বলেন, ‘প্রতিটি কলার কাঁদি ৬০০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এ বছর সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছি, কলার ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। এমন দাম পেলে এ বছর ৫ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হবে। বাজারে এরকম দাম পাওয়া গেলে ভালোই লাভ হবে আশা করছি।’

ঢাকা থেকে আসা কলা ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন তালুকদার জানান, ভালো মানের কলার দামও বেশি। তিনি প্রতিদিন তিন ট্রাক করে কাঁচা কলা কিনে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। গত বছর যে কলার কাঁদি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছেন; সেই কাঁদি এবার ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’

ফেনীর কলা ব্যবসায়ী মো. জালাল উদ্দীন এ হাট থেকে নিয়মিত পাইকারি কলা কেনেন। তিনি বলেন, ‘এক মাস আগে কলার দাম আরও বেশি ছিল। এখন দশমাইল কলার হাটে কলার জোগান বেশি হওয়ায় আগের তুলনায় একটু দাম কমেছে। তবে এবার কলার ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছেন।’

প্রতিদিন কোটি টাকার দিনাজপুরের কলা যাচ্ছে সারাদেশে

দশমাইল কলার হাটের শ্রমিক এরশাদুল জানান, এ হাটে প্রতিদিন ট্রাক লোড দিয়ে একজন শ্রমিক হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারেন। এখানে প্রতিদিন কয়েকশ শ্রমিক কলার ট্রাক লোড দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকেন।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘কলা একটি লাভজনক ফসল। এ অঞ্চলের কৃষকদের উন্নত জাতের কলা চাষের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কলার ভালো ফলন পাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েও সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা কলার ভালো উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। এবার কলার ফলন ও দামে কৃষক খুশি।’

এমদাদুল হক মিলন/এসইউ/এএসএম

Read Entire Article