প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রয়োজন ছিল নিজেদের গোষ্ঠীর একটি লাশ। আর গোষ্ঠীর মধ্যে মাদকাসক্ত ছেলে সিরাজুলের জ্বালায় অতিষ্ঠ ছিল পরিবারও। অতএব বিরোধীপক্ষকে মামলায় ফাঁসাতে এই সিরাজুলকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনায় রাজি হন সিরাজুলের মা শেফালী খাতুনও। এ জন্য তাকে দেড় লাখ টাকা দেন গোষ্ঠীর নেতারা।
এই লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা পূর্ব চর কৈজুরী গ্রামে। মর্মান্তিক এ হত্যাকাণ্ডের ৮ দিনেই রহস্য উদঘাটন করেছে সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ডিবির এসআই শারফুল ইসলাম।
নিহত সিরাজুল ইসলাম মণ্ডল উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত শাহাদৎ হোসেন মণ্ডলের ছেলে।
গ্রেপ্তাররা হলেন— পূর্ব চর কৈজুরী গ্রামের মৃত আলহাজ ওয়াজেদ আলী মণ্ডলের ছেলে মো. আল আমীন মণ্ডল (৩৮), একই গ্রামের সানোয়ার মণ্ডলের ছেলে মো. সেলিম মণ্ডল (৩২), মো. শহিদ আলী মণ্ডলের ছেলে মো. আমিরুল ইসলাম (৩৩), মৃত ইয়াছিন প্রামাণিকের ছেলে মো. ওমর ফারুক (৩৮) ও মৃত আজগর প্রামাণিকের ছেলে মো. আব্দুল গফুর প্রামাণিক (৫৫)।
এসআই শারফুল জানান, গত ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় সিরাজুলকে বেড়ানোর কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় মো. ওমর আলীসহ কয়েক যুবক। পরদিন ২৯ অক্টোবর ভোরে পূর্ব চর কৈজুরী গ্রামের রাস্তার উপর সিরাজুলের ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। সকালে শাহজাদপুর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহতের মা শেফালী খাতুন বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের চুন্নু মেম্বার ও খোকন মাস্টার গোষ্ঠীর লোকজনকে আসামি করে মামলা করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে জেলা পুলিশ সুপার একটি চৌকস তদন্তটিম গঠন করেন। তদন্ত টিম তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত এবং গত ৩ নভম্বের গভীর রাতে শাহজাদপুর থানা এলাকা থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন শাহজাদপুর চৌকি আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এসআই শারফুল আরও বলেন, রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় আসামিরা। আসামিদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আসামিদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, পূর্ব চর কৈজুরী গ্রামের মুসা মণ্ডল ও গফুর প্রামাণিক গোষ্ঠীর সঙ্গে একই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন মাস্টার ও চুন্নু মেম্বার গোষ্ঠীর পূর্ব থেকে শত্রুতা ছিল। ২০২১ সালে দুই গোষ্ঠীর মারামারির ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মুসা মণ্ডল ও গফুর প্রামাণিক গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়।
পরবর্তীতে ওই হত্যা মামলায় বাদীর সঙ্গে আসামিরা ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় আপস মীমাংসা করে নেয়। আপসের ৫ লাখ টাকা ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন মাস্টারের হাতে জমা দেয়। বাকি টাকা যাতে না দিতে হয় এবং বাদীপক্ষের লোকজনকে ফাঁসানোর জন্য মাদকাসক্ত সিরাজুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
জবানবন্দিতে আসামিরা আরও জানায়, ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় সিরাজুলকে নিয়ে এক বাড়িতে আটকে রাখে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাকে ঘটনাস্থলে এনে প্রথমে গামছা দিয়ে গলা চেপে ধরে। এরপর ছোরা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

4 hours ago
9









English (US) ·