প্রতিবিপ্লবের বিরুদ্ধে সজাগ থাকুন : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের সবাইকে গণতান্ত্রিক শক্তির স্বপক্ষের লোকদের সতর্ক পদক্ষেপ রাখতে হবে। কোনো নৈরাজ্যের কারণে কেউ যাতে কোনো সুযোগ না নিতে পারে। এটাও মনে রাখতে হবে- প্রতিবিপ্লব উঁকিঝুঁকি মারে সবসময়, এ উঁকিঝুঁকি যাতে দিতে না পারে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে একটি গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ওপর লেখা জিএম রাজিব হোসেনের ‘দ্রোহের গ্রাফিতি’ গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়।
রিজভী বলেন, আমাদের কাছে তো দৃষ্টান্ত আছে। আমরা ব্রিটেনের বিপ্লব দেখেছি; সেখানে রাজা চালর্সের ছেলে আবার রাজা হয়ে এসেছে শুধু কিছু ভুলের কারণে। ফ্রান্সের যে বিপ্লব হলো লুই সিক্সটিন গিলোটানাইজড হলো, তার ছেলেও একবার প্রত্যাবর্তন করেছিল শুধু ভুলের কারণে। আমাদের কাছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিপ্লবের পরবর্তী যে ভুলগুলো সেটা যেন না হয়। সেটা দেখলে পরে আর কখনো প্রতিবিপ্লব হবে না।
তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাব। আমরা দেশবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী এবং আমাদের সার্বভৌমত্ববিরোধী, আমাদের ইতিহাস-সংস্কৃতি আবহমান বাংলার যা কিছু আছে সেটার চর্চা-অনুশীলন এবং সেটিকে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কখনোই অন্যের হস্তক্ষেপকে মেনে নেব না।
এভাবেই এগুতে হবে। আমাদের যে পরিবর্তন এটাকে সংরক্ষণ করতে হবে নানা কাজের মধ্য দিয়ে।
গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, কি ভয়াবহ দিন গেছে? আপনার ৬০/৭০ লাখ ওপজিশনের অ্যাক্টিভিস্টদের লাইফ হেল করে দিয়েছে। কারও ১০টা, কারও ২০টা, রিজভী ভাইয়ের একাই তিনশটার বেশি মামলা, তাদের জীবন একেবারে শেষ, তাদের ছেলে-মেয়েরা কোথাও চাকরি পায়নি, তারা যদি চুপিসারে কোনোভাবে ধরেন একটা কনস্টেবলেও চাকরি পেয়ে গেছে সেটাও জানাজানি হয়ে গেছে যে, ওনি বিএনপি পরিবারের, তাকে চাকরি দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এখন আমরা দেখছি যে, সে (শেখ হাসিনা) যে ধরনের কথা বলেন, যে এনগার দিয়ে কথা বলছেন। আপনি দেখেন সবাই এক, তার কথা যেই শুনছে তারই তো মাথা ঠিক থাকছে না।
তিনি আরও বলেন, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন, শান্ত হোন। আমাদের কাজটা হচ্ছে, আমরা গবেষণার মাধ্যমে ১৫টা বছর কি ভয়াবহ অবস্থা করেছে সেটা সবাইকে জানাব, প্রত্যেকটা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সেমিনার করব, প্রত্যেকটা দেয়ালে দেয়ালে সে যে অন্যায়-অবিচার করেছে সেটা আমরা লিখে রাখব। যাতে বাংলাদেশে এ পতিত স্বৈরাচার ও তার সাঙ্গপাঙ্গ আর জীবনেও যাতে না ফিরে আাসতে পারে। এটা সবাইকে করতে হবে।
শফিকুল আলম বলেন, আপনারা ভাবছেন যে, বিপ্লব সেই জুলাই-আগস্টের ২১ দিন, এটা ভুল। তার আগেও আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে ১৫ বছর ধরে। আগামীতে আরও ১৫ বছর সংগ্রাম করতে হবে। আমরা একটু ভুলে যাব ওরা আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করবে, এটা যাতে না হয়। বাংলাদেশে যাতে কোনো ধরনের কোনোভাবে স্বৈরাচার এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা আর ফিরে আসতে না পারে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, ‘আমার দেশ’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সরগম পত্রিকার সম্পাদক কাজী রওনক হোসেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, লেখক জিএম রাজিব হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।