অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের কার্যক্রমকে সফল হিসেবে দেখছেন রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দুর্নীতি দমন ও মব সংস্কৃতি ছাড়া সার্বিকভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকার সফলতা দেখিয়েছে।
রোববার (১০ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে ইনস্টিটিউট ফর ইনোভেশন ইন পলিসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: মন্ত্রণালয়ভিত্তিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্র, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের চর্তুমুখী অপতৎপরতা এবং অধিকার আদায়ের নামে দুইশটির বেশি আন্দোলন চলমান থাকার পরেও অর্ন্তবর্তী সরকার যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের দুঃশাসনে থাকা একটি রাষ্ট্রকে নতুন করে পরিগঠনের জন্য যে কমিটমেন্ট দরকার সেই কমিটমেন্ট রাজনৈতিক দলগুলো দিতে পারেনি। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, কেউ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি সাপোর্টিভ ছিল না।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, দুর্নীতি দমন ছিল সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে সরকার তেমন সফলতা দেখাতে পারেনি। তবে তারা যে একটা বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে এটি তাদের বড় সফলতা। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের একটা বড় অংশ নিয়ে সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি, যা রেড সিগন্যাল। কারণ এতে সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এসময় তিনি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের সুস্পষ্ট আইনি ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করেন।
- আরও পড়ুন:
- এখনো ‘সন্তোষজনক নয়’ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
থামছে না বিচারবহির্ভূত হত্যা, ১০ মাসে ঝরেছে ২৯ প্রাণ
ব্যর্থতার পাল্লা ভারী, সামনে চ্যালেঞ্জ সুষ্ঠু নির্বাচন
এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয়ে খুব একটা বলতে চাই না কারণ ড. ইউনূস স্বাভাবিক অবস্থায় দায়িত্ব নেননি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মূল মনোযোগ নির্বাচন। ফলে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক আলোচনা খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না। সরকারকে অবশ্যই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।’ তিনি সরকারের কিছু উপদেষ্টার কারণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেন।
নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু শিক্ষা কমিশন না হওয়ায় শিক্ষায় কাঙিক্ষত পরিবর্তন আসেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে এমন একটা সিস্টেম তৈরি করা যাতে কর্তৃত্ববাদ আর কখনো ফিরে না আসে। এজন্য রাজনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিকভাবে সংস্কারগুলো করতে হবে।
আমার দেশ এর প্রধান প্রতিবেদক বাছির জামাল বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হলে ভালো মিডিয়া প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। আর জনভিত্তিক মিডিয়া না থাকলে সরকার একনায়ক হয়ে উঠতে পারে। এজন্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত।
আরএএস/এসএনআর/জেআইএম